× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাংলাদেশের অর্থনীতি

মূল্যস্ফীতির চার কারণ জানাল বিশ্বব্যাংক

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:০১ এএম

আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৪৮ এএম

মূল্যস্ফীতির চার কারণ জানাল বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য চারটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। এগুলো হলো- অভ্যন্তরীণ জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়া, দুর্বল মুদ্রানীতি, টাকার অবমূল্যায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে আমদানি কমে যাওয়া। সংস্থাটি মনে করে, প্রধানত এ চার কারণে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। এমন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংস্কারের কিছু পরামর্শও দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তার মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছে মুদ্রার বিনিময় হারকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখা, মুদ্রানীতি আধুনিক করা ও রাজস্ব খাতকে সংস্কারের পরামর্শ। বিশ্বব্যাংকের মতে, অর্থনীতিতে এখন বিভিন্ন ধরনের বাধাবিঘ্ন কাজ করছে। ফলে ঝুঁকিও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটবিষয়ক প্রতিবেদন তুলে ধরে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক, চিফ ইকোনমিস্ট বানার্ড হ্যাভেন এবং যোগাযোগ বিভাগের প্রধান মেহেরিন এ মাহবুব। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ নাজমুস সাদাত খান।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো দ্রুত মোকাবিলা করতে পারলে আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আবারও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্যের চাপ, আর্থিক খাতের ঝুঁকি আর অনিশ্চয়তা জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আবার বাড়তে শুরু করবে বলে মনে করে সংস্থাটি। তবে তার জন্য আর্থিক খাতে নীতি সংস্কারের তাগিদ দিয়েছে তারা। সুদ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে প্রকৃত অর্থে বাজারনির্ভর করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটি চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। যদিও গত এপ্রিলে দেওয়া বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে এই হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ আগের পূর্বাভাস থেকে সরে এসেছে সংস্থাটি। তবে নীতি সংস্কার করতে পারলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আবার ৫ দশমিক ৮ শতাংশে উঠবে বলে তারা মনে করছে।

বিশ্বব্যাংক একই দিনে দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপির তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, ভুটানের ৪ শতাংশ, নেপালের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং পাকিস্তানের ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের সব সূচকই নিম্নমুখী রয়েছে। রিজার্ভ কমেই চলেছে। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়েও সংশয় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সার্বিক চিত্র দেখে এমনিতেই বোঝা যায় দেশের অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা গত অর্থবছর থেকেই দেখছি অর্থনৈতিক সূচকগুলো নিম্নমুখী হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু তা কতটা কাজ করছে সেটা দেখা দরকার। এভাবে যদি শুধু দেখতেই থাকি তাহলে যা হওয়ার তাই হবে। এখনই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

উচ্চ মূল্যস্ফীতি চ্যালেঞ্জ

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কেমন থাকেÑ তার ওপর।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারলে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করা সম্ভব হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে দারিদ্র্য কমেছে। প্রতিবছর কমেছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ পয়েন্ট হারে। চরম দারিদ্র্যের হার কমেছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ পয়েন্ট হারে। এ ছাড়া শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, বিদ্যুৎ সুবিধা, স্যানিটেশন ও শিক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ে ভালো করলেও এই সময়ে বাংলাদেশে বৈষম্য বেড়েছে ব্যাপক হারে। উচ্চ নগরায়ণ এ বৈষম্যকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। মানুষের ভোগও চাপের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় খাবারের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে মুদ্রানীতির কার্যকর ব্যবহারের ওপর জোর দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বহুমাত্রিক অগ্রগতি অর্জন করেছে, বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনে। সামাজিক অনেক ক্ষেত্রেও উন্নতি হয়েছে। এখন মূল্যস্ফীতির যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা কমাতে সুদের হারের সীমা পর্যায়ক্রমে তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের কার্যকর তদারকির মাধ্যমে অর্থনীতির ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কারণে ধীরে ধীরে টাকার মান কমে যাচ্ছে। কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আরও কমবে। আমি দেখতে পাচ্ছিÑ কর্মসংস্থান নেই, উৎপাদন নেই। এমনকি যেসব দেশীয় পণ্য উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারজাত করা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজদের কারণে ১০ টাকার পণ্য ৬০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির সবদিকেই চ্যালেঞ্জ। বাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। কারণ কোনো তদারকি নেই। মাঝে মাঝে দেখা যায়, ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালায়। কিন্তু তার ফল কোথায়? সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কোথায়, তারা কি কাজ করে? সব মিলিয়ে সরকারের ব্যর্থতায় দেশ চতুর্মুখী সমস্যায় নিমজ্জিত হয়েছে।’

রাজস্ব আদায়ে ভাটা

আমদানি কমার ফলে রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে আনুমানিক ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আয়কর আদায়ও কম হচ্ছে। আর্থিক খাতের দুর্বলতা গভীর হয়েছে। ঋণের সুদের হারের সীমাবদ্ধতার কারণে মুদ্রানীতির ট্রান্সমিশন ব্যাহত হচ্ছে। খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এসব সমস্যা সমাধানে নজর দিতে হবে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পরামর্শ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুদের হারের সীমা তুলে দিতে হবে। একক মুদ্রা বিনিময় হার করতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। খেলাপি ঋণও কমাতে হবে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংক খাত, রাজস্ব ব্যবস্থাপনাসহ পুরো আর্থিক খাত এখন যেভাবে চলছে, সেভাবে চলতে পারে না। পরিবর্তন আনতে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। রাজনৈতিক কারণে নির্বাচনের আগে সংস্কার শুরু করা সম্ভব না-ও হতে পারে। তবে আগামী নির্বাচনের পর যে সরকারই আসুক না কেন, তাদের বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম চালাতেই হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন থামাতে হবে। সুদহার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিকে যেতে হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা