× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আসছেই

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:১২ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ঘোষণা দিয়ে চার কন্টেইনার পণ্য এনেছিল ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জিওয়াই ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড। চালানটি খালাসের জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে আমদানিকারক হিসেবে মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। বিল অব এন্ট্রিতেও ঘোষণা ছিল ক্যালসিয়াম কার্বোনেট। কিন্তু পণ্য চালানটি খুলে সেখানে গুঁড়া দুধ ও ডেক্সট্রোজ পেয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ওই পণ্য চালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় তাতে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের পাশাপাশি ২৮ মেট্রিক টন গুঁড়া দুধ এবং ৪০ মেট্রিক টন ডেক্সট্রোজ পাওয়া যায়। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্যগুলো এনে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রায় এক কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে চেয়েছিল।

শুধু এই চালানটি নয়, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এভাবে প্রতিনিয়ত আমদানি হচ্ছে নানা পণ্য। তবে অসাধু উপায়ে কী পরিমাণ পণ্য আমদানি হচ্ছে তার কোনো তথ্য নেই। 

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি মাসে মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্যের ১৫ থেকে ২০টি চালান আটক করছেন তারা। এসব পণ্য কখনও ধরা পড়ে। আবার কখনও অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বের হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টম হাউসের উপসহকারী পরিচালক মো. সাইফুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পণ্য আমদানিতে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয় শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করি বলে অধিকাংশ সময় তারা ধরা পড়ে। রিস্ক ম্যানেজমেন্টের আওতায় সেটি আমরা আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনিয়মের বিষয়টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় কমার্শিয়াল পণ্যে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্যে এটি খুব একট হয় না। আমাদের দেশে কমার্শিয়াল পণ্য আমদানি হয় ১০ শতাংশের মতো। এর মধ্যে কিছু অসাধু আমদানিকারক আছেন যারা অনিয়মের আশ্রয় নেন।’ 

কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আনা অন্তত ২৪৮টি চালান আটক করেছে। গড়ে প্রতি মাসে আটক হচ্ছে ২০টি চালান। এর মধ্যে মাসে সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৮টি পণ্য চালান আটক করা হয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, মিথ্যা ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি পণ্য এসেছে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে। এই চার মাসে ১২২টি পণ্য চালান আটক করে এআইআর শাখা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৮টি পণ্য চালান আটক করা হয় নভেম্বর মাসে। 

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, এই ২৪৮টি চালান থেকে ৬০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে কাস্টম হাউস। এর মধ্যে অনিয়মের বিপরীতে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব ছিল ২৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। বাকি ৩৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে জরিমানা হিসেবে। 

কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস্তবে অনিয়মের মাধ্যমে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আসছে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। কাস্টমসের অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে এসব পণ্য ছাড় করিয়ে নেন আমদানিকারকরা। শুল্ককর ফাঁকি দিতেই আমদানিকারকরা নানা অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছেন। কখনও পণ্যের এইচএস কোড পরিবর্তন করে মাল নিয়ে আসছেন, আবার কখনও যেই পণ্য ঘোষণা দিচ্ছেন ওই পণ্যের ভেতরে অন্য পণ্য লুকিয়ে নিয়ে আসছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাস্টম হাউসের এক রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, গত অর্থবছরে অনিয়মের মাধ্যমে আমদানি করা যেসব পণ্য চালান আটক করা হয়েছে, এগুলোর প্রায় প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে অনিয়মের ধরনটা ছিল ভিন্ন। একটি চালানে এইচএস কোড পরিবর্তন করে আনা হলে, অন্যটি আনা হয়েছে কম মূল্য দেখিয়ে। কোনোটি ঘোষিত পণ্যের মাঝখানে লুকিয়ে আনা হলে অন্যটি আনা হয় আমদানিকারকের মিথ্যা নাম ঠিকানা ব্যবহার করে। 

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই পণ্য আমদানিতে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয় না। শুধু চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস নয়, অর্থসংশ্লিষ্ট যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই অনিয়ম হয়। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কিছু অসাধু ব্যক্তি থাকে যারা অনিয়ম করে। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও অসাধু ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং কাস্টমস কর্মকর্তারা অনিয়মের আশ্রয় নেন। অনেক সময় এসব পণ্য চালান ধরা পড়ে, আবার অনেক সময় ধরা পড়ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনিয়ম ধরা পড়লেই প্রথম আঙুল ওঠে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের দিকে। কিন্তু অনেক সময় দেখা অনিয়মের বিষয়টি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জানেও না। অনিয়মের ক্ষেত্রে অনেক সময় শুল্ক কর্মকর্তাদের নাম উঠে আসে। কিন্তু আমরা চাই না এরকম অনিয়মের ঘটনা ঘটুক।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা