× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খেলাপিদের সুবিধার নীতিতে ব্যাংক খাতের সর্বনাশ!

জয়নাল আবেদীন

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৭ এএম

আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৪৪ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি : সংগৃহীত

ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে দেশের আর্থিক কাঠামো। একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা ও মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি। ফলে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না এসব সূচক। সংশ্লিষ্টদের মতে, গত কয়েক বছরে একটি বিশেষ শ্রেণির জন্য দেশের আর্থিক নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়। যার প্রভাবে এখন খাদের কিনারে পুরো অর্থনীতি। যেসব নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছিল তার মধ্যে ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালা অন্যতম বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। 

ঋণ পুনঃতফসিল হচ্ছেÑ কোনো একটি ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমাকে বাড়িয়ে দেওয়া। ২০১৯ সালের আগে গ্রাহকরা ঋণ পুনঃতফসিল করার কোনো আগ্রহ দেখাত না। কারণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য ৩০ শতাংশ পর্যন্ত এককালীন বা ডাউন পেমেন্ট জমা দিতে হতো। কিন্তু খেলাপিদের প্রতি নমনীয় হতে গিয়ে ২০১৯ সালে ডাউন পেমেন্টের হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। যদিও ব্যাংকের প্রভাবশালী বড় গ্রাহকরা কোনো ডাউন পেমেন্ট না দিয়েও খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকের অনুকূলে ঋণসীমা বাড়িয়ে দিয়েও ব্যাংকগুলো খেলাপি হওয়ার যোগ্য ঋণকে নিয়মিত দেখাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে ২০২০ সালের পুরো সময়ে ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ পান গ্রাহক। ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর নির্ধা‌রিত ঋণের কিস্তির ২৫ শতাংশ জমা দিয়েই নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে বিবেচনার সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বছরজুড়েই এ সুবিধা ভোগ করেন ব্যাংকের গ্রাহকরা। ২০২২ সালে ন্যূনতম ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেসব গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করেননি, তাদের জন্য চারবার ঋণ পুনঃতফসিল বা ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে। তারা ঋণ পরিশোধে ২৯ বছর সময় পাবেন। সেই প্রজ্ঞাপন এখনও বহাল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এত সুবিধা দিয়েও যখন খেলাপি কমছে না, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে সুবিধা দিচ্ছে কেন? এগুলো সোজাসুজি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আগে ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালা অনেক কঠোর ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেস-টু-কেস পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দিত। নির্দিষ্ট অঙ্কের ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ না করলে কোনো ঋণই পুনঃতফসিল হতো না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।’ 

তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালী গ্রাহকরা এখন ডাউন পেমেন্ট না দিয়েও ঋণ পুনঃতফসিল করে নিচ্ছেন। এখন আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজের ক্ষমতা ও দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর হাতে দিয়ে দিয়েছে। এ কারণে ব্যাংক নিজের ইচ্ছামতো ঋণ পুনঃতফসিল করছে। এতে আপাতদৃষ্টিতে ব্যাংকের ঋণ পরিস্থিতি ভালো দেখালেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে ভয়াবহ। বাছবিচার না করে পুনঃতফসিল করা ঋণ আদায় হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’

পুনঃতফসিলকৃত ঋণকে ‘স্ট্রেসড’ বা ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ হিসেবে দেখায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। তবে হালনাগাদ তথ্যমতে, ২০২২ সাল শেষে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতিও ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। আবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। খেলাপি হয়ে গেছে ব্যাংকের ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকা এবং দেউলিয়া আদালতে আটকে আছে ৪২৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ঋণ এখন দুর্দশাগ্রস্ত।

২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পুনঃতফসিলের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীকালে দুই দফায় প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই নীতিমালার কিছু শর্ত শিথিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নীতিমালার সুবিধা নিয়ে ২০১২ সালে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে ব্যাংকগুলো। এরপরের বছর থেকে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনঃতফসিলের গতি। ২০১৩ সালেই ১৮ হাজার ২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পান খেলাপি গ্রাহকরা। এরপর ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৩৫০ কোটি ও ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। ২০১৬ সালে পুনঃতফসিল করা হয় ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এরপর থেকে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ বাড়ছেই।

২০১৭ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে পুনঃতফসিল করা হয় আরও ২৩ হাজার ২১০ কোটি টাকার ঋণ। আর ২০১৯ সালে পুনঃতফসিলের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ডাউন পেমেন্ট মাত্র ২ শতাংশে নামিয়ে আনায় ওই বছর পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০২০ সালে কোভিড-১৯ সৃষ্ট দুর্যোগে পুনঃতফসিলের হার কিছুটা কমে আসে। ওই বছর ব্যাংকের কোনো টাকা পরিশোধ না করেও গ্রাহকরা খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পান। তারপরও ২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর পুনঃতফসিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে পুনঃতফসিল করা হয় ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকার ঋণ। আর ২০২২ সালে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। আর সেই সুবাদে এখন পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা