সড়ক নির্মাণে গাফিলতি
কুড়িগ্রাম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৪৩ এএম
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৫২ পিএম
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের ভেলুরহাট বাজার থেকে আনোয়র মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা খুঁড়ে রাখায় বর্ষা মৌসুমে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে স্থানীয়দের। প্রবা ফটো
কুড়িগ্রামে ২ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে এলজিইডির প্রভাতি প্রকল্পের সড়ক নির্মাণ কাজ। চার মাস মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ আড়াই বছরে হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার নির্দেশনা মানছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় কাজের সময়সীমা বৃদ্ধি করলে দুর্ভোগ বেড়েছে স্থানীয়দের। সড়ক নির্মাণে এই গাফিলতির কারণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ফলে এলজিইডির প্রভাতি প্রকল্প আদৌ প্রভাতের মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, এলজিইডির প্রভাতি প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের ভেলুরহাট বাজার হতে পূর্বদিকে আনোয়ার মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত ১০০০ মিটার রাস্তা নির্মাণের কার্যাদেশ পায় চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজটির প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ১ কোটি টাকা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা এলজিইডি দপ্তর গত ২০২১ সালের ২৪ জুনে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। একই বছরের ২২ অক্টোবর কাজ সমাপ্তির সময়সীমা বেঁধে দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে কাজই শুরু করেনি। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে রাস্তার মাঝ অংশের মাটি খুঁড়ে নামমাত্র কাজ শুরু করে। পরে এলাকাবাসীর চাপে মাত্র ৪০০ মিটার জায়গায় ইটের খোয়া ফেলে রেখে বাকি ৬০০ মিটারে মাটি খোঁড়া অবস্থায় রয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুম খনন করা রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কাঁচা সড়কটি। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
ভেলুরহাট এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এলজিইডি অচল ও অযোগ্য ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ায় কাজ সমাপ্ত করতে পাচ্ছে না। বছরের পর বছর রাস্তা খুঁড়ে রাখায় আমরা এলাকাবাসী মহাবিপদে পড়ে আছি। যানবাহন এবং অসুস্থ রোগী ওই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। কবে এই রাস্তার কাজ শেষ হবে সেটাও ওই ঠিকাদার বলে না।’
একই এলাকার মুদি দোকানদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তা খোঁড়ার ১ বছর হলো। তবু রাস্তা ঠিক হয় না। হামার আগের রাস্তা কাঁচা হলেও অনেক ভালো ছিল। কীসের নতুন রাস্তা করতে যেয়ে এখন আর রাস্তা দিয়ে সাইকেল, মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুলেন্স কোনোটাই যেতে পারে না। প্রতিদিন মানুষ এক্সিডেন্ট করতেছে। এলজিইডি যাতে রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণ করে এজন্য আমরা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে কুড়িগ্রামের কে বা কারা কাজ নিয়েছে আমি জানি না। সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করতে অনেক সময় ১০-১৫ বছর পর্যন্ত সময় লাগতেই পারে। এমন অনেক রেকর্ড আছে। এটা নিয়ে নিউজ করতে সাংবাদিকদের এত আগ্রহ কেন? এ-কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।’
কুড়িগ্রাম এলজিইডির প্রভাতি প্রকল্পের নিয়োজিত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রাশেদুন্নবী বলেন, ‘আমরা চাই কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। কাজটি কী কারণে স্থগিত করে রাখা হয়েছে এজন্য আগামী তাদেরকে তলব করা হয়েছে। উপযুক্ত জবাব না পেলে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।’
কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। অল্প কিছুদিন হলো যোগদানের। আমি খোঁজখবর নিয়ে যদি সত্যতা পাই তাহলে উক্ত ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের চিঠি ইস্যু করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজটি সম্পন্ন করব। উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারের কোনো প্রকার গাফিলতি মেনে নেওয়া হবে না।’
উল্লেখ্য, গ্রামীণ জনপদের সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নে ২০১৯ সালে শুরু হয় প্রভাতি প্রকল্প। সরকার ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যাগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্টের (ইফাদ) সহায়তাপুষ্ট প্রভাতি প্রকল্পের মাধ্যমে কুড়িগ্রামে গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন কাজ করে আসছে।