প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৫৩ পিএম
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:২২ পিএম
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বৈদেশিক ঋণ ছাড় কমেছে। এর পাশাপাশি বেড়েছে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে গত জুলাইয়ে ঋণ ছাড় কমেছে ৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার। তবে আগের অর্থবছরের চেয়ে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ একদিকে ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের চাপ বেড়েছে, অন্যদিকে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় কমেছে। ফলে বৈদেশিক ঋণের টাকার বড় অংশই চলে যাচ্ছে পরিশোধ করতে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে।
ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে জুলাইয়ে ঋণ ছাড় হয়েছে ৪০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের জুলাইয়ে ঋণ ছাড় হয়েছিল ৪৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ঋণ ছাড় কমেছে ৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার। তবে জুলাইয়ে ঋণ ছাড় কমলেও বেড়েছে ঋণ পরিশোধ। গত অর্থবছর জুলাইয়ে যেখানে সরকারকে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেখানে চলতি অর্থবছরে জুলাইয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
তবে আগের অর্থবছরের চেয়ে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি ২৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার ঋণ ছাড় করেছে জাপান। অথচ এসময়ে এক টাকাও ছাড় করতে পারেনি চীন ও রাশিয়া। তবে ভারত করেছে ২১ লাখ ডলার। অবশ্য ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে। এ মাসে ৫০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, যা গত অর্থবছরের একই মাসে ছিল ১১ লাখ ডলারের কম।
ইআরডির প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ৩২৮ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হবে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ২৭৪ কোটি ডলার। গত মার্চ পর্যন্ত বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের প্রথম দিকে সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ব্যয় কম হয়। বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দের ১ শতাংশের কম অর্থ ব্যয় করেছে। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দের কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। তবে অর্থবছরের শেষ দিকে অর্থ ব্যয় বাড়বে।
এ ব্যাপারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘গত কয়েক অর্থবছরে বাজেট সহায়তা ও কোভিড সহায়তা অর্থছাড়ে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি অর্থবছরেও উন্নয়নের সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে উন্নয়ন সহযোগীদের শর্ত মেনে বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার না করলে বাজেট সহায়তা পাওয়া কঠিন হবে।’
বিদেশি ঋণের সুদ বেড়েছে
২০১৫ সালে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর থেকে উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া ঋণের ওপর সুদ বাড়ছে। বৈশ্বিক সুদহার নির্ধারণের অন্যতম মাপকাঠি লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারড রেটের (লাইবর) পরিবর্তে সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (সোফর) নামে নতুন ঋণব্যবস্থা চালুর ফলেও সুদহারে পরিবর্তন এসেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ‘সোফর রেট’ বেড়ে ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। এ কারণে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এখন ৫ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক থেকে আগে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যেত। এখন তা শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ২০ শতাংশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণে সুদের হার ১ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ। ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণে সুদের হার ২ থেকে প্রায় ৪ শতাংশ। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য জাইকার ঋণের সুদের হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। গত বছর পর্যন্ত এ হার ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। এখন তা ২ দশমিক ২৬ শতাংশ।
জানতে চাইলে ইআরডির ফরেন এইড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পুরোনো ঋণের সুদের হারে পরিবর্তনের সুযোগ নেই। নতুন ঋণের ক্ষেত্রে একেক উন্নয়ন সহযোগীর একেক হারের সুদ রয়েছে।’