প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:১৮ পিএম
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে খুঁটি দিয়ে বিদ্যুতায়ন করা কঠিন। তাই সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে এ অঞ্চল আলোকিত করা হবে। একই সঙ্গে গভীর নলকূপের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করবে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সৌরশক্তিচালিত নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে রাঙামাটির পার্বত্য জেলার বিদ্যুৎবিহীন প্রত্যন্ত এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব করেছে রাঙামাটির পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। এ প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি পার্বত্য জেলাগুলোতে পাইলট প্রকল্প। চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি জেলার সব উপজেলার বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের কিছু ব্যয় অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। যেমনÑ এ প্রকল্পের একেকটি ল্যাট্রিন স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এ ব্যয় খুব বেশি বলে প্রতীয়মান হওয়ায় তা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটিতে ৭০০টি নলকূপ বসানোর কথা রয়েছে। একেকটি নলকূপ স্থাপনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এটিকেও অস্বাভাবিক বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। জানা গেছে, রাঙামাটি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন-সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা খুবই অপ্রতুল। এ কারণে বসবাসরত জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় সৌরশক্তিচালিত গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য কমিউনিটি ল্যাট্রিন স্থাপন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্টে আলোচ্য প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ব্যয় কমানোসহ বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ডিপিপি সংশোধন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পিইসি সভা সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু খাতে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় তা যৌক্তিকীকরণ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পানির স্তর কমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ স্থাপন করা যৌক্তিক হবে কি না, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সরকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পরিবেশ রক্ষায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু রাঙামাটি জেলার প্রায় অর্ধেক এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় অন্যান্য জেলার তুলনায় নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সেবা পেতে অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছে, সুযোগ-সুবিধাও খুবই অপ্রতুল।
পাহাড়ের ওপরে নলকূপ খনন সফল না হওয়ায় পাহাড়ের নিচে নলকূপ খনন করে নিরাপদ পানি সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় হস্তচালিত নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন খুবই কষ্টসাধ্য এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পাওয়া যায় না। এসব কারণে দূষিত পানি পান করে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয় জনগণ।
এ ছাড়া জেলাটিতে কিছু পাবলিক টয়লেট থাকলেও বিদ্যুৎবিহীন এলাকাগুলোয় সার্বিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। তাই বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় সোলার সাবমারসিবল পাম্পচালিত গভীর নলকূপসহ কমিউনিটি ল্যাট্রিন স্থাপন করা হলে স্থানীয় জনগণের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা পাওয়া অনেকটা সহজ হবে। এসব কারণে প্রত্যন্ত এলাকার জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য আলোচ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৭০০টি সোলার সাবমারসিবল পাম্প, ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক, ওভারহেড স্ট্রাকচারসহ গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে, এজন্য ডিপিপিতে ৩৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ৯০টি সোলার সাবমারসিবল পাম্পচালিত গভীর নলকূপসহ কমিউনিটি ল্যাট্রিন স্থাপন করা হবে। এ কাজে ১০ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি কোটি টাকা বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক কাজে খরচের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।