শুনতে কী পাও
রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৫৬ এএম
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:২৩ পিএম
খননের পর আবারও ভরাট হয়ে যাওয়া ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন নদী
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন, সুক, লাচ্ছি নদী ও যমুনা খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪ কোটি ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭০০ টাকা। এ কাজের আওতায় ছিল টাঙ্গন নদীর ৩৫ কিলোমিটার খনন, নদীর দুই ধারে ১ লাখ ৫ হাজার বর্গমিটার এলাকায় ঘাস ও ৭ হাজার গাছের চারা রোপণ। খনন, ঘাস ও গাছ রোপণের কাজটি পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাজুল-নিয়াজ জেভি।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি নদী খনন কাজের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি রমেশচন্দ্র সেন। ২০২১ সালের এপ্রিল নাগাদ খননকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হয়।
নদী থেকে উত্তোলন করা বালু ফেলা হয়েছিল নদীর পাড়ঘেঁষে। গত বছর জুন ও সেপ্টেম্বরের দুই দফা টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে টাঙ্গনের দুই পাড় তলিয়ে যায়। পাড়ে রাখা বালুর অধিকাংশই আবার ফিরে যায় নদীতে ও আশপাশের ফসলি জমিতে। নদীর নাব্য ফেরানোর যে আশা ছিল, তা এরই মধ্যে ফিকে হয়ে গেছে। নদী থেকে তোলা বালু কৃষিজমিতে পড়ায় দেখা দিয়েছে সমস্যা।
আকচা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের কৃষক তাপস পাল বলেন, ‘নদী খুঁড়ে কোনো কাজে আসেনি তেমন। বরং ক্ষতি হইছে, নদীর পাশের জমিলা বালু দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে। এই বালু সরাইতে আর মাটি ভালোভাবে আবাদি করে তুলতে কত দিন যে সময় লাগিবে কে জানে।’
ঠাকুরগাঁও ঢোলারহাট ইউনিয়নের কুমারপুর বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নদী যখন খনন হয় তখন মনে হয়েছিল নদীগুলো তাদের প্রাণ ফিরে পেল। খননের পর পানি ছিল অনেক। কিন্তু এক বছর পার না হতে আবার আগের মতো অবস্থা হয়েছে নদীটির। খননের যে মাটি দুই ধারে রাখা ছিল সেগুলো দিয়ে আবারও নদীটা ভরাট হয়ে গেছে। নদী খননের নামে টাকাগুলো পানিতে গেল।’
বুড়ির বাঁধের কৃষক মোতালেব হোসেন বলেন, ‘নদীর ধারের পাশে আমার ৪ একর আবাদি জমি আছে। যখন নদী খনন করে তখন বলছিলাম জমির পাশে যে মাটি আর বালু ফালাচ্ছেন, মেঘের পানিতে সেগুলো তো জমিতে আসবে; আবাদি জমি ভরাট হয়ে যাবে। তারা তখন বলে খুঁড়ার পর পাহাড়লাত ঘাস ও গাছ লাগায় দিব। কোনো মাটি ধুয়ে জমিতে পড়বে না। এলাও পর্যন্ত গাছ তো দূরের কথা, ঘাসও লাগায়নি। হামার অর্ধেক জমি প্রায় ভরাট।’
সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন বলেন, ‘নদীগুলো যাতে আগের রূপ ফিরে পায় সেজন্য সরকার কোটি টাকা খরচ করেছে; কিন্তু খননের পর নদীগুলো আগের অবস্থায়। এতে নদীর পাশের কৃষিজমির অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক জমিতে আবাদ করতে পারে না।’
এ বিষয়ে নদী খনন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাজুল-নিয়াজ জেভির তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে আবার নদীটি ভরাট হয়ে গেছে, এর মূল কারণ খননের পর উত্তোলিত বালু সরকারি, সামাজিক প্রতিষ্ঠানে নিলামে বিক্রি করলে তারা সেখান থেকে বালু নিয়ে আসত; এতে নদীও ভরাট হতো না আর পাশের ফসলি জমির তেমন ক্ষতি হতো না।’ নদীর দুই ধারে ঘাস আর গাছ লাগানোর প্রশ্নে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নদীর দুই ধারে স্তূপ করে রাখা বালু বৃষ্টির পানিতে চলে গেছে নদীতে। ভরাট হয়ে যাওয়া সেসব জায়গা আবার নতুন করে খনন করা হবে। আর খননের পর ঘাস আর গাছ লাগানো হবে নদীর দুই ধারে; যাতে আবার নদীটা ভরাট না হয়।’