প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:০৫ পিএম
বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মুনাফা বেড়েছে অধিকাংশ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের। যার প্রভাবে কোটিপতি হিসাব বাড়ছে ব্যাংকে। গত ছয় মাসে কোটি টাকার হিসাবে যোগ হয়েছে আরও ৩ হাজার ৬০৮টি। ফলে চলতি বছরের জুন শেষে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টিতে।
ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে ১ কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুন শেষে কোটিপতি হিসাবে জমা আছে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। ছয় মাস আগেও অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি হিসাবে ১ কোটি টাকার বেশি জমা ছিল। যেখানে জমা ছিল ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি।
কোটিপতি হিসাব বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘গত এপ্রিল থেকে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। অনেক ব্যবসায়ীর কাছে ক্যাপিটাল মেশিনারিজসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকৃত পণ্য মজুদ ছিল। যার কারণে বিশ্ববাজারের ন্যায় দেশের বাজারে ওইসব পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ব্যাপক লাভ করেছে। তাছাড়া ভোগ্যপণ্যসহ বেশকিছু ব্যবসায় এখন ব্যাপক মুনাফা অর্জন করছেন ব্যবসায়ীরা। এখানে তারও প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের অনুসারে, ২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকগুলোয় জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। মোট ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৯২টি হিসাবে এই আমানত জমা হয়েছে। এর মধ্যে কোটিপতিদের যে আমানত রয়েছে, তা মোট ব্যাংক খাতের আমানতের ৪৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত জুন শেষে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬ এবং সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৫২০।
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। আর কোটি টাকার ওপরে ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬টি হিসাবে জমার পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাব ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। হিসাবগুলোতে জমার পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৭৭২টি। যেখানে জমার পরিমাণ ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। ৫ কোটি থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ২৪৫টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৬ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ৪ হাজার ৮১টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৮৬৫টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ২৭৬টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯০৯টি আমানতকারীর হিসাব।
আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০৭টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৫৩টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭২২টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা ১ হাজার ৮২৪টি।