বিবৃতি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৪ পিএম
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৪ পিএম
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল ডেটা প্যাকেজ সীমিতকরণের নতুন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- তা ‘গ্রাহক বান্ধব’ নয় বলে মনে করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি। ভোক্তা অধিকার সংগঠনটি বলছে, এ সিদ্ধান্ত প্রান্তিক সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহার সীমিত করবে এবং সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হবে।
জানা গেছে, দেশের প্রায় ১১ কোটি ৮৮ লাখ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৬৯ শতাংশ গ্রাহক তিন দিন ও সাত দিনের ছোট ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনেন। কিন্তু এই জনপ্রিয় প্যাকেজ দুটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি। একই সঙ্গে ১৫ দিন মেয়াদের প্যাকেজও বন্ধসহ প্যাকেজের ধরন ও প্রমোশনাল এসএমএস-এর সংখ্যা কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর মোবাইলের ডেটা প্যাকেজ নিয়ে নতুন এ নির্দেশিকা প্রণয়ন চূড়ান্ত করে বিটিআরসি। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে অপারেটরদের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে।
মোবাইল ডেটা প্যাকেজ সীমিতকরণের বিটিআরসির এই ঘোষণার প্রতিবাদে আজ (১৭ সেপ্টেম্বর) বিবৃতি দিয়েছে ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি। এতে সই করেছেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহসভাপতি সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।
বিবৃতিতে ক্যাবের নেতারা বলেন, ‘মানুষ তাদের প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন মেয়াদের ডেটা প্যাক কেনেন। এদের মধ্যে বড় অংশই কেনেন স্বল্প মেয়াদের প্যাকেজ এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ছোট ছোট ডেটা প্যাকের চাহিদা বেশি। দেশে ও প্রবাসে আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ, মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা নিতে তিন দিন মেয়াদের ডেটা প্যাকেজ অধিকাংশ গ্রাহকের পছন্দ। প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী, বেকার, শিক্ষার্থী এমনকি নিম্ন আয়ের মানুষজন মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক। এসব গ্রাহকের চাহিদাও ভিন্ন ভিন্ন। দেশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ গ্রাহক ছোট ছোট প্যাকেজগুলো সাশ্রয়ী ও কম টাকায় সামর্থ্য অনুযায়ী গ্রাহকরা কিনতে পারেন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘বিটিআরসি সীমিত ও প্রান্তিক মানুষের সামর্থের কথা চিন্তা না করে তিন দিনের প্যাকেজ বন্ধ করে দিয়ে কার স্বার্থ রক্ষা করছে? প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষের ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করতে কী এই আয়োজন কিনা- তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কারণ সীমিত আয়ের এমনকি শিক্ষার্থী বেকার তরুণ-তরুণী ও শ্রমজীবীদের পক্ষে ২০০ বা ৩০০ টাকা দিয়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব নয়।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছেন। আগামীতে সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে যাচ্ছে, সেখানে দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে সরকার ডিজিটাল সেবার আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর। বিটিআরসির এই সিদ্ধান্ত সরকারের পরিকল্পনার শুধু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না, এটা উল্টো পথে হাঁটার ইঙ্গিত বহন করছে। আর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশের বিপুল পরিমাণ মানুষ সরকারের ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।’
সংগঠনটি মনে করে, ‘বড় ডেটা প্যাকেজগুলো রেখে ছোট প্যাকেজগুলো বাতিল করা হলে বড় বড় করপোরেটগুলোর সুবিধা হবে একই সঙ্গে মোবাইল অপারেটররা লাভবান হতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের কোনো অধিকার হরণ বা অধিকার ভোগ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা জনগণের করের টাকায় বেতন-ভাতা ভোগকারী কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমীচীন নয়।’ তাই অবিলম্বে ব্রডব্যান্ডের মতো এক দেশ এক রেট, মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেজের মূল্যের সামঞ্জস্যতা আনা, অব্যবহৃত ডেটা ফেরত পাওয়া ও যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সব শ্রেণির গ্রাহকের মতামত নেওয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি।