প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:১১ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধের ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে। জুলাই-আগস্ট সময়ের জন্য ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারের আমদানি দায় পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল বা আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ২১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন বা দুই হাজার ১৪৮ কোটি ডলার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, জুলাই-আগস্ট সময়ের জন্য ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারের আমদানি দায় পরিশোধ করা হয়েছে। এরপর আমাদের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।
প্রসঙ্গত, এতদিন রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) সরবরাহ করা ৪ দশমিক ১০ বিলিয়ন ও শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ২০ কোটি ডলার (১৫ কোটি ডলার শোধ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ২০ কোটি, লং টার্ম ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) তহবিলে ৩ কোটি ৮৫ লাখ, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) আমানত রিজার্ভে দেখানো হচ্ছিল।
বিপিএম-৬ অনুসারে এগুলো রিজার্ভের অংশ নয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভের হিসাব থেকে ৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। তবেই পাওয়া যাবে আইএমএফের হিসাবে নিট রিজার্ভ।
আঞ্চলিক দেশগুলোর লেনদেনের নিষ্পত্তির একটি মাধ্যম হলো আকু। তেহরানভিত্তিক এ সংস্থার সদস্য দেশ হলো- ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। সদস্য দেশগুলো প্রতি দুই মাস অন্তর অর্থ পরিশোধ করে।
আকু পেমেন্ট করার পর সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। প্রতি দুই মাসের দায় পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করে এসব দেশ। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন, মার্চে ১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন, মে মাসে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন এবং জুলাই মাসে পরিশোধ করে ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, গত ৩০ আগস্ট বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আকুর বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এ পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
আর গত ৩০ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন; যা আগের বছরের একই দিনে ছিল ৩৯ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন; যা এক বছর আগে পাঠানো ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের ১ মাস ২৫ দিনে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বেশি পরিমাণ আমদানি বিল পরিশোধ করতে হয়। এতে রিজার্ভ কমতে থাকে।
সম্প্রতি অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার পর আমদানি কমেছে।
আমদানি কমায় বিদায়ি অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি চলতি হিসাবের ঘাটতি কমানো গেছে। তবে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি নতুন রেকর্ড করেছে। এর পরিমাণ ২১৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর আগে আর্থিক হিসাবের সর্বোচ্চ ঘাটতি ছিল ২০০৮-০৯ অর্থবছরে, সাড়ে ৮২ কোটি ডলার। বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং ঋণের প্রবাহ কমে যাওয়া এবং বেসরকারি খাতের ঋণসহ ঋণের দায় পরিশোধ বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
আর্থিক হিসাবে ঘাটতি সচরাচর দেখা যায় না। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত পাঁচবার এই ঘাটতি হয়েছিল। রিজার্ভ নিয়ে যে বাংলাদেশ ব্যাংক হিমশিম খাচ্ছে, এর বড় কারণ এই ঘাটতি। বৈদেশিক মুদ্রায় আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়াই এর মূল কারণ। এ কারণেই গত অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি হয়েছে ৮২২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এটিও বাংলাদেশের জন্য নতুন রেকর্ড।