সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৩ ১৪:৪৩ পিএম
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৩৯ পিএম
ফরিদপুরে পানির অভাবে ক্ষেতেই পাট শুকাচ্ছে, জাগ দিতে পারছেনা কৃষকরা। প্রবা ফটো
ফরিদপুরের সদরপুরে এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্ত পানির সংকট ও অনাবৃষ্টির কারণে পাট চাষিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। জমিতে পানির অভাবে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনকি পানির অভাবে পাট কাটার পর পাট জাগও দিতে পারছেন না তারা। গুটি কয়েক চাষি পুকুর জলাশয়ে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে পাট জাগ দিলেও সে পানি দুই থেকে তিন দিন পর শুকিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে প্রতি বিঘায় পাট চাষিদের বাড়তি ৫ হাজার টাকার মতো গুনতে হচ্ছে। সারা বছর চাষিরা পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়েছে। আর সেই কষ্টের ফসল জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে দিতে পারছেনা জাগ। তাদের সারা বছরের কষ্ট যেন পানির অভাবে এখানেই শেষ।
উপজেলার রামচন্দ্রপুর, পূর্ব শ্যামপুর, ডিক্রীরচর ও কৃষ্ণপুরসহ ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মণ পাট ঘরে তুলতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজারে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে পাট বিক্রি হচ্ছে।
শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করতে কিছু কৃষককে লোকসানেই পাট বিক্রি করতে হচ্ছে। ওই এলাকার অধিকাংশ কৃষকরাই তিন থেকে চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ করেছেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে পানির অভাবে সব পাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড খরায় জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে এবং পাটগাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। কিছু জমির পাট রোদে পুড়ে লালচে হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে খাদে পানি দিয়ে সেখানে পাট জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন চাষিরা। তবে প্রতিদিন প্রচণ্ড রোদের কারণে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও তাপদাহ থেকে সোনালি আঁশ পাট গাছকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে জমিতে দিচ্ছেন সেচ।
সদরপুর ইউনিয়নের কৃষক জালাল মৃধা বলেন, ‘এ বছর চার বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। গত বছর পাটের দাম বেশি পাওয়ায় চলতি বছর পাটের আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন এলাকার কৃষকরা। নির্বিঘ্নে পাটের আবাদ হলেও এখন পাট কাটা ও জাগ দেওয়া নিয়ে মহাবিপদে পড়েছি। পানির অভাবে ক্ষেতের পাট কাটা হচ্ছে না তেমনি আমনের চারা রোপণও পিছিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা পড়েছি চরম বিপাকে।’
সদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের কৃষক বিরাজ মোল্লা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোনো জায়গায় পাট জাগ দেওয়ার মতো পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই কষ্টও অনেক সময় ভাল লাগে ও সুখে পরিণত হয়। যদি আমরা কষ্টের ভাল ফল পেতাম এবং পাটের ভাল দাম পাওয়া যেত। এখন তো পাট আমাদের গলার ফাঁস হয়ে গেছে, না পারছি ফেলে দিতে, না পারছি কিছু করতে।’
কৃ্ষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষক ইকবাল মোল্লা বলেন, ‘এবার পাটের ভাল ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। এতে চরম বিপাকে পড়েছি।’
ভাষানচর ইউনিয়নের ডিক্রীরচর গ্রামের পাট চাষি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘এ বছর এক একর জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট কেটে জাগ দিতে পারছি না। শুকনো পাটের ওপরে কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রেখেছি। মেশিনে সেচ দিয়ে পানি দিতে হবে। যা অনেক ব্যয়বহুল।’
সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় জানান, সদরপুর উপজেলায় এ বছর মোট ৬ হাজার ৫২৮ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জমিতে পাটের আবাদ ভাল হয়েছে। কিন্ত শেষ সময়ে চাষিরা পানির অভাবে ও অনাবৃষ্টির কারণে পাট জাগ দিতে বিপাকে পড়েছে।
তিনি আরও জানান, এক মণ পাট উৎপাদন চাষিদের ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। বর্তমানে বাজারে প্রায় ৩ হাজার টাকায় ভাল মানের এক মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। ফলে পাটের বাজারমূল্যে চাষিরা লাভবান। সদরপুরে যতগুলো খাল-বিল রয়েছে সেগুলো খননের জন্য যথাযথ কতৃপক্ষের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করব। যেন পরবর্তীতে পাট চাষিদের যেন পাট জাগ দিতে সমস্যা না হয়।