প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ২০:৩০ পিএম
প্রবা ফটো
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব পোর্টালে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করেছে ৫২টি প্রতিষ্ঠান। আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান, মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর, তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী উদ্যোগ, এমনকি ওষুধ কোম্পানি ও ঢেউশিট উৎপাদনকারী কোম্পানিও। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের চারটি ব্যাংক, নগদ, বিকাশ, বাংলালিংক ও পাঠাওসহ আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সম্প্রতি দেশে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদনও আহ্বান করা হয়। নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনা ও লেনদেন আরও সহজ করতে সরকারের ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করে গত জুন থেকে। শুরুতে আবেদন করার শেষ সময় ছিল গত ১ আগস্ট। সে সময়ের মধ্যে কোনো আবেদন জমা না পড়ায় পরে তা বাড়িয়ে ১৭ আগস্ট করা হয়।
শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ ছাড়াই পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর চলবে ‘ডিজিটাল ব্যাংক’। থাকবে না সশরীরে লেনদেনের কোনো ব্যবস্থা। মোবাইল আর ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহারে গ্রাহকদের দেবে ব্যাংক সেবা।
গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাগুজে নথি জমা দিয়ে নয়, ডিজিটাল পদ্ধতিতেই ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করতে হবে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র ডিজিটাল উপায়েই জমা দিতে হবে। আবেদন ফি হবে পাঁচ লাখ টাকা, যা অফেরতযোগ্য।
এই ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য লাগবে ১২৫ কোটি টাকা, পরিচালক হতে লাগবে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা। নতুন ধারার এ ব্যাংক চালু করতে আগ্রহীদের আবেদন নিতে নতুন ওয়েব পোর্টাল খুলে বাংলাদেম ব্যাংক।
এর আগে গত ১৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ চালুর অনুমোদন দেয়। ১৫ জুন এ বিষয়ে নীতিমালা জারি করে। এরই ধাবাহিকতায় ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য অনলাইনে আবেদন জমা দিতে গত ২১ জুন একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবেদনের জন্য ১ আগস্টের মধ্যে আগ্রহীদের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে বলা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় কেউ আবেদন না করায় ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদনের সময় বাড়ানো হয়।
নীতিমালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা কোনো স্থাপনা থাকবে না। মোবাইল বা অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকরা লেনদেন করতে পারবেন। তাদের সশরীরে ব্যাংকের কোনো শাখায় যেতে হবে না। ব্যাংক কোম্পানি আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী এ ব্যাংক চলবে।
নীতিমালায় আরোও বলা হয়, ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মূলধন সংরক্ষণ চুক্তি করতে হবে। কোনো ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়লে তা উদ্যোক্তাদের জোগান দিতে হবে। ঋণখেলাপি কেউ ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এমনকি ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের কারও বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত কোনো মামলা আদালতে চলমান থাকলে তারা আবেদন করার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
দেশের বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংক মিলে ডিজিটাল ব্যাংক করার উদ্যোগ নিয়েছে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ডিজি ১০ ব্যাংক পিএলসি’। একসঙ্গে ১০টি ব্যাংক মিলে এ ধরনের উদ্যোগ দেশে এখন পর্যন্ত এটিই প্রথম। ডিজিটাল ব্যাংক করার জন্য একসঙ্গে জোট বা কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে সেগুলো হচ্ছে- সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি), মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক মিলে ডিজিটাল ব্যাংক করতে চায়। এগুলো হলো- সোনালী, অগ্রাণী, জনতা ও রূপালী। ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করেছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’, ‘বিকাশ’ ও মোবাইল অপারেটর কোম্পানি বাংলালিংক, রাইড শেয়ারিং পাঠাও।
এ ব্যাপারে নগদের হেড অফ কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল বলেন, ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনা করতে প্রস্তুত। লাইসেন্স পেলে গ্রাহকদের সব ধরণের সেবা দিতে পারবে। এ ব্যাংকের কোন শাখা থাকবে না, এক্ষেত্রে আমাদের শক্তিশালী এজেন্ট পয়েন্ট রয়েছে তাদের ব্যবহার করে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে থাকবো।’
ডিজিটাল ব্যাংক প্রসঙ্গে এক বার্তায় বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৭ কোটি ৩ লাখ মানুষের একটি দেশ, যেখানে ব্যাংকিং সেবার পরিসর সীমিত। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটালাইজেশন বাংলাদেশের জনগণের জন্য বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে আসবে। বাংলালিংক এই যাত্রার প্রথম পর্যায়ে দেশের জনগণকে সেবা দেওয়ার বিশেষ সুযোগ পেয়েছে। এখন আমরা ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। এই পদক্ষেপের জন্য আমরা বাংলালিংক ও আমাদের গ্রুপ পর্যায়ে দক্ষতা ও সক্ষমতা কাজে লাগাবো।’