প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ২০:১৩ পিএম
নানা উদ্যোগেও দেশে আসছে না আশানুরূপ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। আগস্টের প্রথম ১৮ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠিয়েছেন ১০৪ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় (প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ধরে) ১১ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। রবিবার (২০ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগস্ট মাস শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৭৯ কোটি ডলার বা সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা।
এই অঙ্ক আগের মাস ও আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কম হবে। চলতি বছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর আগের বছরের আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি ডলার।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি মাসের ১৮ দিনে দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৮৯ কোটি ৯০ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
জানা যায়, রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিট্যান্স আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করার পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণে অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।
সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ ডলার। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
প্রসঙ্গত, ডলার সংকট দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত করছে। শিল্প খাত ছাড়াও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানসহ সার্বিক উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তবু মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো যাচ্ছে না। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। ২০২২ সালে এক ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা এখন তার দাম বেড়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ছাড়িয়ে গেছে। দাম বেড়েছে ২৫ টাকা ৫০ পয়সা। এ বৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশ। ডলারের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির ফলে পণ্য, জ্বালানিসহ অন্যান্য সেবার মূল্যবৃদ্ধির চাপ জনগণকে ভোগ করতে হচ্ছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে আমদানি পণ্যের দামও বেড়ে গেছে। ফলে বিনিয়োগ খুব একটা বাড়ছে না। কর্মসংস্থানও সংকুচিত হচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। আমদানি ব্যয়ও বাড়তে থাকে। জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানিতে ২৫ শতাংশ এলসির মার্জিন আরোপ করে। পরে ধাপে ধাপে তা বাড়িয়ে শতভাগ করা হয়। কেবল খাদ্য, জ্বালানি, কৃষিশিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ আমদানি ছাড়া সব পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে দেশের কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে। প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৭ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ১১২ থেকে ১১৪ টাকা।