প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২২ ১১:৪৯ এএম
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২২ ১৩:১২ পিএম
জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি খালের প্রায় ২০ কিলোমিটার দখলমুক্ত ও সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসি। এসব খালের দুই পাশে নির্মাণ করা হবে ওয়াকওয়ে। পাশাপাশি নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৮৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ৬২৯ কোটি এবং ডিএসসিসি নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে ২৬৯ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকের সভায় উঠবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় এটি অনুমোদন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন ‘খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি’ শীর্ষক প্রকল্পটির কার্যক্রম চলতি অক্টোবরেই শুরু হয়ে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় চারটি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ১২টি মোটরসাইকেলের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। তিনটি কম্পিউটার সেট কেনা হবে। ল্যাপটপ কেনা হবে তিনটি। পেট্রোল লুব্রিকেন্ট বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে—কালুনগর খালের ২.৪ কিলোমিটার, জিরানী খালের ৩.৯ কিলোমিটার; মান্ডা খালের ৮.৭ কিলোমিটার এবং শ্যামপুর খালের ৪.৭৮ কিলোমিটার দখলমুক্ত ও সংস্কার। খাল উন্নয়নের অংশ হিসেবে খালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, পলি অপসারণ, স্লোপ প্রটেকশন, ল্যান্ড স্কেপিং ও সবুজায়ন; নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি ও নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে ৩৮.৬ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন সুরক্ষা বেষ্টনী, ৩৬টি পদচারী সেতু, ১৯টি গাড়ি চলাচল সেতু, ১০টি পাবলিক টয়লেট, ৩২.৪৪ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, চারটি প্লাজা, বাইসাইকেল লেন স্থাপন ও ৭৭১টি নান্দনিক বাতি স্থাপন।
ডিএসসিসি বলছে, সরকার টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-এসডিজি-৬ অনুসারে সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ২০৩০ সালের মধ্যে পানিদূষণ রোধে গুণগত মান উন্নয়ন এবং অপরিশোধিত পানির পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডিএসসিসির আওতাধীন খালগুলোয় সুষ্ঠু পানিপ্রবাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনসহ নাগরিক সমস্যার উন্নয়ন ঘটবে এবং নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ফলে এসডিজি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতার বিষয়ে ডিএসসিসি বলছে, ডিএসসিসি ৭৫টি ওয়ার্ড ও ১০টি অঞ্চল নিয়ে গঠিত, যার মোট আয়তন ১০৯.২০ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৯ হাজার ৩৭১ জন। এ সিটি করপোরেশনের কোনো কোনো স্থানের জনসংখ্যার ঘনত্ব পৃথিবীর সর্বোচ্চ। ডিএসসিসি এলাকায় বুড়িগঙ্গা, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী রয়েছে এবং কালুনগর খাল, হাজারীবাগ খাল, ধানমন্ডি লেক, রামপুরা, মান্ডা খাল, জোয়ারি খাল, কাজলা খাল, ডিঅ্যান্ডডি রোডসাইড খাল, কুতুবখালি খাল, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডসাইড খাল, শ্যামপুর খাল ইত্যাদি খাল ও লেক উল্লেখযোগ্য।
ডিএসসিসির অধিভুক্ত পান্থপথ, পরিবাগ, খিলগাঁও, বাসাবো, সেগুনবাগিচা ও ধোলাই খাল বিভিন্ন সময়ে ভরাট করে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। খাল ও বক্স কালভার্টগুলো বর্তমানে ডিএসসিসি রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার বৃষ্টির পানি বিদ্যমান ড্রেন ও ক্যাচপিট হয়ে স্টর্ম স্যুয়ার লাইন এবং বক্স কালভার্টের মাধ্যমে এ খাল ও নদীগুলোয় পতিত হয়। তবে ডিএসসিসির অধিকাংশ স্থানে অপরিকল্পিত নগরায়ণের পাশাপাশি জলাশয়সহ নিচু জায়গাগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিদ্যমান ড্রেনেজ লাইনের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি দ্রুততার সঙ্গে নিষ্কাশিত হতে পারে না। এ ছাড়া নগরীর আকার আয়তন বৃদ্ধি পেলেও জলাশয় খালের পরিমাণ ক্রমে হ্রাস পেয়েছে। ফলে বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাতে ডিএসসিসির বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে নাগরিক জীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। তাই এ প্রকল্প ডিএসসিসির জন্য গুরুত্বর্পূণ।
প্রকল্পটি তৈরির দায়িত্বে থাকা ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. খায়রুল বাকের বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার কাজের চেয়ে আমাদের কাজের মান অনেক ভালো হবে। কাজ অনেক টেকসই হবে। মানুষ হাতিরঝিলের মতো এসব এলাকায় ঘুরতে যাবে, বিনোদনের জন্য যাবে। ডিএসসিসির রেট শিডিউল অনুসারেই প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের মূল্য প্রাক্কলন করা হয়েছে। তা ছাড়া এ প্রকল্পে কাজও ওয়াসার প্রকল্পের কাজের চেয়ে অনেক বেশি। ওয়াকওয়ে, সাইকেলওয়েসহ অন্যান্য কাজ খালগুলোকে নান্দনিক রূপ দেবে।’
প্রবা/আরএম/জেও