প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৫২ পিএম
২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় কমে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো পোশাক আমদানি কমিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, তৈরি পোশাক খাত থেকে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যে পরিমাণ রপ্তানি আয় হয়েছে। পরের তিন মাসের আয় তা থেকে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কম।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশের ক্রেতারা পোশাকের মতো খাতে এখনও কম অর্থ ব্যয় করছেন। তাই রপ্তানি আয় কিছুটা কমে গেছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোয় আরও কয়েক মাস এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা রপ্তানিকারকদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) থেকে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার। এর আগের প্রান্তিকে যা ছিল ১ হাজার ২২৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। হিসাব অনুযায়ী তিন মাসের ব্যবধানে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় কমেছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। বছরের প্রথম তিন মাসে তৈরি পোশাকের একটি ধরন ওভেন থেকে আয় হয়েছে ৫১৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার এবং অপর বৃহৎ ধরন নিটওয়্যার থেকে আয় হয়েছে ৬৬০ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল-জুন মাসে আরএমজি খাতে মোট রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ২৬৯ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। সেখানে আয় হয়েছে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম। এপ্রিল-জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, কানাডা এবং বেলজিয়াম ছিল বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য। এই ৯টি দেশ থেকে বাংলাদেশের ৮৩২ কোটি ৯১ লাখ ডলার আয় হয়েছে আরএমজি খাত থেকে। হিসাব অনুযায়ী যা মোট আরএমজি রপ্তানির প্রায় ৭১ শতাংশ।
সবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মন্তব্য ছিল কোভিড-১৯ মহামারির পরে বাংলাদেশে আরএমজি সেক্টর পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর ফলে সাপ্লাই চেইন ব্যাঘাতের প্রভাব, বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি এবং ফেড কর্তৃক আর্থিক নীতি কঠোর করার মতো চ্যালেঞ্জগুলো এ খাতের অগ্রগতিকে প্রভাবিত করতে পারে। এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধির জন্য, আন্তঃপোশাক বৈচিত্র্য, উত্পাদনশীলতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি, পণ্যের উদ্ভাবন, নতুন বিশ্ববাজার অন্বেষণ এবং এমজি কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, পুরো অর্থবছরের চিত্র আলাদা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক দুর্বল আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় এসেছে।
মূলত পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে গত বছর, যা এর আগের বছরের (২০২১-২২) তুলনায় ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। বিদায়ি অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। এ সময়ে পোশাক রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানির আয় ছিল ৪ হাজার ২৬১ কোটি ৩১ লাখ ডলার।