প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১৩:১৪ পিএম
করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ডলার সংকট দিন দিন বাড়ছেই। ফলে দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন বা ১১৪ কোটি ডলার বিক্রি করেছে।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ৬৮ দশমিক ৬০ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ২০২৩ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। ওই দিন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৯ টাকা, সর্বনিম্নও ১০৯ টাকা। সব ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভ আরও কমে যাবে। সেজন্য সরকারের প্রয়োজনেই শুধু রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়া হচ্ছে।
ডলার সংকটের কারণে গত অর্থবছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো বছরে এত বেশি পরিমাণ ডলার বাজারে বিক্রি করেনি।
বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ডলারের দর বাজারভিত্তিক করলে সংকট অনেকটা কেটে যাবে। তা না করে কৃত্রিমভাবে দর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেক ব্যাংক ও ব্যবসায়ী এর সুযোগ নিচ্ছে। আবার প্রবাসী রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক ব্যাংক ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার বেচাকেনা করছে। ডলারের দর বাজারভিত্তিক করলে অনিয়ম কমত। আবার আমদানিকারকরা যেন প্রকৃত খরচ বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দর নির্ধারণ করেন, সরকারের দিক থেকে সে বিষয়ে চাপ দেওয়া যেত।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে এখন দেশের মূল্যস্ফীতি এমনিতেই অনেক বেশি। এখন কৃত্রিমভাবে দর নিয়ন্ত্রণ না করে বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, কেউ তা জানে না। তখন আবার ডলার অতি মূল্যায়িত হতে পারে।’
গত মঙ্গলবার বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দর ৫০ পয়সা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন থেকে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে দর ছিল ১০৯ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’ তবে সব ব্যাংক এই দরে ডলার পাচ্ছে না। সরকারের প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলোকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।
আন্তঃব্যাংক ও গ্রাহক পর্যায়ে সব ব্যাংকই বর্তমানে ভাসমান বিনিময় দর অনুসরণ করছে। তবে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে নিজেদের নির্ধারিত আলাদা দর অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাকে বলা হচ্ছেÑ ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সেলিং রেট’। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করত, সেটিকে ‘ইন্টার ব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট’ বা আন্তঃব্যাংক লেনদেন হার নামে অভিহিত করা হতো।
ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে দরে ডলার বিক্রি করত, তখন সেই দরকেই ডলার রেট ধরা হতো। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ডলারের দর নির্ধারণ করে দিয়েছে। বর্তমানে রেমিট্যান্স ১০৯ টাকা, রপ্তানি বিল নগদায়ন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা এবং আমদানি নগদায়ন হয় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়নের গড় করে এক টাকা স্প্রেড করে। গত সোমবার এবিবি-বাফেদা সভায় ডলারের নতুন দর করা হয়। প্রতি ডলার রেমিট্যান্স ১০৯ টাকা এবং রপ্তানি পরিশোধের বিল ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। আর এবিবি-বাফেদার এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঠিক এক দিন পর মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সেলিং রেট বাড়াল।