× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইউরোপে ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশের আম

ফারুক আহমাদ আরিফ

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৪৯ পিএম

আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৩ ১৪:০৬ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বাংলাদেশের আমের ঘ্রাণে বিমোহিত হচ্ছে ইউরোপের বাজার। এতদিন সাধারণ মার্কেটে আম গেলেও এবারই প্রথম ঢুকেছে সুপার শপে। সুইজারল্যান্ডের প্যাট্রাকা সুপারশপে ১২ টনের মতো আম রপ্তানি করা হয়েছে, যার বাজার দর ৩০ হাজার ইউরো। গ্লোবাল ট্রেড লিং নামের বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান সেখানে আম রপ্তানি করেছে। 

গ্লোবাল ট্রেড লিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিয়া সুলতানা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, তারা চলতি বছরের জানুয়ারিতে শরীয়তপুরে একটি মিটিং করেছিলেন। পরবর্তীতে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল উইংয়ের কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আম রপ্তানির ব্যাপারে কথা বলেন। সুইজারল্যান্ডের প্যাট্রাকা সুপারশপের সঙ্গে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় কথা হয়। প্রথম দফায় গত ৩০ মে হিমসাগর আম পাঠানো হয়। গত জুন পর্যন্ত তিন দফায় হিমসাগর, আম্রপালি ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো পাঠানো হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের আমের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

গত বছর গ্লোবাল ট্রেড লিং ৭০ টন আম রপ্তানি করে দেশে আম রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বলে জানান রাজিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ইউরোপে যেসব দেশ থেকে আম যায় তার মধ্যে বাংলাদেশের আম স্বাদে ও মানে অতুলনীয়। বাজারও আছে। এ ক্ষেত্রে উত্তম কৃষিচর্চা অনুসরণ করতে হবে। বিদেশের বাজার ধরতে পারলে আম দিয়ে শেষ করা যাবে না। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা আম রপ্তানি করবেন বলে জানান।

সরকার ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে। ২০২২ থেকে ২০২৭ পর্যন্ত ৪ বিভাগে ১৫ জেলার ৪৬ উপজেলায় রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করতে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশ আম উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম স্থানে থাকলেও রপ্তানির ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। অথচ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আমের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে রপ্তানি করতে পারলে আমের ঘ্রাণেই বিশ্ব জয় করা যাবে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪৮ একর জমিতে আমের আবাদ হচ্ছে। সেখানে উৎপাদিত আমের পরিমাণ ২৪ লাখ ৬৮ হাজার পাঁচশ মেট্রিক টন। পরিবহণ, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও উৎপাদন পর্যায়ে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার না করায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। 

আরিফুর রহমান বলেন, বিশ্বে ২১ জাতের আম রপ্তানি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে ৭২ জাতের আম উৎপাদিত হয়। এসবের মধ্যে ১. গোপাল ভোগ, ২. হিমসাগার, ৩. আম্রপালি, ৪. ফজলি, ৫. সুরমা, ৬. বারি-৪, ৭. ল্যাংড়া আম ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি বৃদ্ধি করতে বেশকিছু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আরিফুর রহমান বলেন, উত্তম কৃষিচর্চা অনুযায়ী কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৫০ শতক জমির জন্য চারা, সার, বালাইনাশক ও ব্যাগিংয়ের ব্যবস্থা করা। 

তিনি বলেন, চলতি বছর ৯৯০টি বাগান তৈরি করা হয়েছে। ৫ বছরে ৮ হাজার ৪০০ বাগান তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার কৃষককে আম উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ বছরকে মূল্যায়ন করে আগামীতে বাজার আরও বিস্তৃত করার পথ খোঁজা হবে। গত বছর বিশ্বের ২৮টি দেশে আম রপ্তানি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ফ্রান্স বাংলাদেশের আম নিতে চায় বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ঢাকাস্থ ফ্রান্সের কমার্শিয়াল উইংয়ের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান আম আমদানির বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ফ্রান্স আমাদের আম পছন্দ করেছে।

নওগাঁর আম চাষি সোহেল রানা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আজ হতে ১০ বছর আগেও আম আমদানি করা হতো ভারত থেকে। এখন দেশে প্রচুর আম উৎপাদিত হচ্ছে। এতে আম রপ্তানির পথ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, রপ্তানি বাড়াতে শুধু শ্যামপুরের প্যাকিং হাউজ থেকে কাজ করলে হবে না। এজন্য প্রয়োজন আম উৎপাদনের জেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংরক্ষণাগার, প্যাকিং হাউজ তৈরি করা। পোশাক রপ্তানিকারকরা সরকারের পক্ষ থেকে যেমন ২০ শতাংশ সহায়তা পায় আম রপ্তানিকারকদের তা দেওয়া দরকার। আর ব্যাগিং ও প্যাকিং করতে সরঞ্জামগুলো আমদানি করতে হয়। এসবের শুল্ক কিছু কমিয়ে দিলে ভালো হয়। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তরুণরাও আম চাষে এগিয়ে আসছে। এখানকার মাটি এতই উর্বর যে চারা রোপণ করলেই সুমিষ্ট আম ফলে। বর্তমানে পরিকল্পিতভাবে বাগান তৈরি করা হচ্ছে। আম দিয়ে খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারক বরেন্দ্র কৃষি উদ্যোগের কর্ণধার মুনজের আলম মানিক বলেন, সাদা আমচুর কাঁচা ও পাকা আমের পাউডার, আমসত্ত্ব ড্রাই ম্যাংগো বিদেশে রপ্তানি করছেন তিনি। দিনকে দিন এর চাহিদা বাড়ছে।

বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজার খোঁজার ক্ষেত্রে রপ্তানি ও আমদানিকারকরাই কাজ করছেন। তারাই বাজার খুঁজে বের করবেন। আমাদের দূতাবাসগুলোতে যেসব কমার্শিয়াল উইং আছে তারা বাজার খোঁজার ক্ষেত্রে কোনো সহায়তা করেন বলে শুনিনি। তারা যদি বাজার খুঁজতেন তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য আরও বিস্তৃত হতো।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা