× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঋণাত্মকে শেষ অর্থবছর

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩ ২০:১৫ পিএম

ঋণাত্মকে শেষ অর্থবছর

আর্থিক খাতে সংকট, বিনিয়োগে নানা শর্ত আর মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে বেশি পরিমাণে ভাঙানোর দিকে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি সুদের হার বেশি হওয়ায় এই খাত থেকে ঋণ নেওয়াতেও অনিহা সরকারের। এজন্য গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে মানুষের বিনিয়োগ যেমন কমেছে ঠিক একই ভাবে আগের বিনিয়োগ পরিশোধে মনোযোগী ছিলো সরকার। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যে অঙ্কের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এজন্য সরকারকে উল্টো তিন হাজার ২৯৬ কোটি টাকা সরকার তার কোষাগার ও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা থাকে। সরকার তা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির ভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসাবে গণ্য করা হয়।

আলোচিত সময় (জুলাই-জুন) ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৮৪ হাজার ১৫৪ টাকা। সব মিলিয়ে এই অর্থবছরে যা বিনিয়োগ হয়েছে তার চেয়ে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছে সরকার। অর্থাৎ বেশি সুদে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণে আগ্রহ কম সরকারের। 

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে একক মাস হিসাবে জুন মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। বিপরীতে ওই মাসে মূল ও মুনাফা বাবদ সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে ৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। এক মাসে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ২৬৭ কোটি টাকা। 

এদিকে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না নিয়ে কম সুদে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে। গত অর্থবছর সরকার ব্যাংক খাত থেকে মোট ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। এর আগে কোন অর্থবছর সরকার এতো বেশি ঋণ নেয়নি। অথচ, অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকার গত অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত বছর বিশ^বাজারে হঠাৎ তেলের দাম বেড়ে যায়। সে কারণে সরকার ওই খাতে অতিরিক্ত প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না নেওয়ায় ব্যাংক খাতে চাপ তৈরি হয়েছে।

তবে এর সাথে একমত নন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সারোয়ার হোসেন। তিনি মনে করেন সঞ্চয়পত্রের ঋণের চাপ ব্যাংক খাতে পড়ার কথা নয়। 

এদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমাতে সরকার গেল দুই অর্থবছর একাধিক শর্ত আরোপ করেছে। সবশেষ ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনা হয়। এছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এসব কড়াকড়ির প্রভাবে বর্তমানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলেও এখনও তা ব্যাংকের তুলনায় বেশি।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একসময় কোনো স্কিমের মেয়াদ শেষ হলে আবার সেখানেই বিনিয়োগ করতেন বেশিরভাগ গ্রাহক। তবে এখন যাদের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে তারা আর নতুন করে এখানে বিনিয়োগ করছেন না। ফলে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। যার কারণে বিক্রির চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ বেশি করা হচ্ছে।

অতি মাত্রায় সুদ পরিশোধ কমাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নানা শর্ত দেওয়া হয়েছে। যার কারণে এ খাতে বিনিয়োগ ঋণাত্বক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধিতে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে এবার বাজেটের ঘাটতি পূরণে সরকার সঞ্চয়পত্রের নির্ভরতাও কমিয়ে ফেলেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। যার পরিমাণ গত অর্থবছরের চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা