প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩ ২০:০৪ পিএম
প্রবা ফটো
এতদিন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির কোনো সংজ্ঞা ছিল না। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করবে না তাদের ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণগ্রহণ ও ব্যাংকের কাছে ঘোষিত উদ্দেশ্যে ঋণের টাকা ব্যয় না করলে ওইসব গ্রাহককে বিবেচনা করা হবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে।
সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে (২০২৩) নতুন এই উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে গত ২৬ জুন ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস হয়। এতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংজ্ঞা ও করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এতে পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করার পাশাপাশি খেলাপিদের ঋণ নেওয়ার সুযোগ প্রদানসহ নানা পরিবর্তন আনা হয়।
সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা আত্মীয় যে-ই হোক না কেন, তাদের সবাইকেই জামানত দিয়ে ঋণ নিতে হবে। ব্যাংকগুলো ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। আর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণ, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু, বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের কাছে কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুরোধ করলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার নাম চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে তার বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দিতে হবে। এরপর প্রত্যেক ব্যাংক-কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাত কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে সেই মর্মে অবহিত করবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ফলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর আপিল করতে পারবে এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পাঁচ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। নোটিস পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে। এই মামলা অর্থঋণ আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করবে না।
কোনো ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকা না পাঠালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই ব্যাংককে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে। যদি লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে, তাহা হলে ওই লঙ্ঘনের প্রথম দিনের পর প্রত্যেক দিনের জন্য অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা কোনো পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একক বা অন্যজনের সঙ্গে কোনো ব্যাংকের শতকরা ১০ ভাগের বেশি শেয়ার কিনতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা কোনো পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো ব্যাংক কোম্পানির ‘উল্লেখযোগ্য শেয়ারধারক’ (ব্যাংক কোম্পানির মালিকানা স্বত্বের ৫ শতাংশের বেশি) হতে পারবেন না।
কোনো ব্যাংকে ন্যূনতম তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ সর্বোচ্চ ২০ জন পরিচালক থাকবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো ব্যাংকের পরিচালক ও পরিচালকের পরিবারের সদস্যদের বা কোনোভাবে তাদের নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠানের সুদ বা মুনাফা মওকুফ করা যাবে না।