প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩ ১৫:০২ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা। তবে এবার আগামী এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা কমিয়েছে দেশটির ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থনীতিবিদ জ্যান হ্যাটজিয়াস বলেন, ‘আগের পূর্বাভাসে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন মন্দার শঙ্কা ছিল ২৫ শতাংশ, এখন তা কমে ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।’
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের মন্দার শঙ্কা কমার প্রধান কারণ হলো সাম্প্রতিক সময়ের মূল্যস্ফীতির তথ্য আমাদের অনেকটা আত্মবিশ্বাসী করেছে। আমরা মনে করছি মূল্যস্ফীতি আরও কমিয়ে আনতে আমাদের পদক্ষেপ কার্যকর হবে।
এদিকে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদের হার বৃদ্ধির প্রবণতা দেশটির অর্থনীতিকে মন্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কারণ গত জুনেও ভোক্তা ও উৎপাদকের মূল্যস্ফীতি কমেনি।
অপরদিকে ২০২২ সালের প্রথম দিকে ফেড তার রেট-হাইকিং ক্যাম্পেইন শুরু করার পর থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাংকঋণে সুদের হার বেড়েছে। তবে এমন পরিস্থিতিতেও দেশটির অর্থনৈতিক কার্যকলাপ স্থিতিশীল রয়েছে।
তবে সামনের বৈঠকে ফেড আবারও ব্যাংকঋণে নীতি সুদহার বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন হ্যাটজিয়াস। তিনি বলেন, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্ভবত আগামী সপ্তাহে তার রেট-সেটিং মিটিংয়ে আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার বাড়াবে। তবে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে এটিই ফেডের সর্বশেষ সুদহার বৃদ্ধি হবে বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলমান থাকবে। তবে ব্যাংকঋণে উচ্চ সুদহারের কারণে প্রবৃদ্ধির গতি ধীর হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে গত আড়াই বছরের মধ্যে চলতি বছরের জুনে চাকরির বাজার সবচেয়ে বেশি সংকুচিত হয়েছে। তবে একই সময়ে বেড়েছে মজুরি। এদিকে আবারও রয়েছে ফেডের সুদের হার বাড়ানোর শঙ্কা। ফলে দেশটিতে চাকরির বাজারের অস্থিতিশীলতা কাটছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মে মাসে দেশটিতে ১ লাখ ১০ হাজারের মতো কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। সুদের হার বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায়ীরা নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করছেন না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ছাড়াও গত মাসে অর্থনৈতিক সংকটে দেশটিতে খণ্ডকালীন কাজ করা লোকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক ফোরকাস্টিংয়ের পরিচালক শন স্নেইথ বলেন, সামনে বেতনের পরিমাণ কমারও একটা আভাস রয়েছে। তবে এখনও শ্রমবাজার শক্তিশালী রয়েছে।
এদিকে ইউরোপের দেশ জার্মানিতেও আকস্মিকভাবে কমেছে শিল্পোৎপাদন। এতেই দেশটির দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা কমেছে। গত এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে জার্মানিতে শিল্পোৎপাদন শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিস। যদিও আগেই বিশ্লেষকরা উৎপাদন কমার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
জার্মানির বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে বিষাক্ত সংমিশ্রণ বলে উল্লেখ করেছেন ডাচ মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আইএনজির প্রধান অর্থনীতিবিদ কারস্টেন ব্রজেস্কি। তিনি বলেন, দুর্বল উৎপাদন সম্ভাবনা ও কম অর্ডার শিল্পোৎপাদনকে মন্থর করে তুলেছে। এগুলো অর্থনীতিতে বিষাক্ত মিশ্রণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে আরও বেশি বিনিয়োগ দরকার।
সামনের দিনগুলোতে অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার অবনতি হয়েছে। সামনে সম্ভবত আরও অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে আরেক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান এলবিবিডব্লিউ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ জেনস-অলিভার নিকলাশ বলেন, ‘মাঝখানে ভালো পরিমাণের অর্ডার এসেছিল। তবে আবার আমরা খারাপ সময়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আমরা হয়তো স্থবিরতা দেখতে পাব। কারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নতুনভাবে পতনের সম্ভাবনা অনেক বেশি।’ সূত্র : রয়টার্স