প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩ ২৩:৩৯ পিএম
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৩ ২৩:৪০ পিএম
দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। ছবি : সংগৃহীত
আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
তিনি বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে আছি; ব্যবসায়ীরা আছেন। আজীবন আপনার সঙ্গে থাকব। কারণ আপনার বিকল্প শুধু আপনি। আজকে সারা দুনিয়ার চমক শেখ হাসিনা। ইউরোপ, আমেরিকা এবং ভারতসহ সারা দুনিয়াকে শেখ হাসিনা আকৃষ্ট করতে পারেন। তিনি কূটনীতির দিক থেকে দেশকে একটা মধ্যাবস্থায় রেখেছেন। এতে করে আমাদের সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। তার ২০/২৫ বছরের প্রধানমন্ত্রীর অভিজ্ঞতা আরেকজনের অর্জন করতে আরও ২০ বছর লাগবে। সুতারং আপনার কাছ থেকেই আমাদের সার্বক্ষণিক সেবা নিতে হবে।’
শনিবার (১৫ জুলাই) দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সম্মেলনে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এ মন্তব্য করেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এগিয়ে গেলে এইদেশে একজন মানুষও গরিব থাকবে না। আমাদের ১৭ কোটি মানুষ আমাদের বড় শক্তি। দেশের মানুষকে নিয়ে চীন আজকে বহুদুরে চলে গেছে। আমাদেরও বড় শক্তি আমাদের দেশের মানুষ। আজ ইউরোপ এবং আমেরিকা বাংলাদেশকে তাদের চিন্তা-ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে নিচ্ছে। সম্প্রতি ইউরোপ ও আমেরিকার প্রতিনিধিরা এসে বলে গেছেন, তারা বাংলাদেশে এসেছেন সম্পর্ক জোরদার করতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার করও বা এটা করও ওটা করো- এমন কিছু তারা চাপিয়ে দিয়ে যায়নি। বলেছে, একটি সুন্দর নির্বাচন করো। আমাদের নেত্রীও এটা চান। এ ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি নেই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিতিতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানে এক-এগারের সরকার। এই সরকার এলে গত ১৫-২০ বছরে ধরে যারা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাদের আবারও জেলে যেতে হবে। সেই স্বপ্ন যদি কেউ দেখেন; তা প্রতিহত করতে এই ব্যবসায়ীরাই যথেষ্ঠ । সেই স্বপ্ন দেখে আর লাভ নেই।এই সম্মেলনে অনেকে আছেন যারা এক-এগারোর ষড়যন্ত্রের সরকারের সময় জেলে গিয়েছেন, অত্যাচারিত হয়েছিলেন। আমি সৌভাগ্যবান; সেই সময় আমি দেশে ছিলাম না। কিন্তু আমাদের কর্মচারীদের জেলে যেতে হয়েছিল। আবার তত্বাবধায়ক নামে এক-এগার সরকার নিয়ে আসার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সে সরকার আসলে ব্যবসায়ীদের আবার জেলে যেতে হবে।’
এক-এগারের সরকার প্রসঙ্গে বসুন্ধরা গ্রপের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘তখন আমি লন্ডনে ছিলাম। সেখান থেকে বলেছিলাম, সব কিছু বন্ধ করে দিতে। বিভিন্নভাবে সব ব্যবসায়ীদের বার্তা পাঠিয়েছিলাম। তোমরা সব বন্ধ করো। বাংলাদেশে কি হচ্ছে জনিয়ে তখন জাতিসংঘে একাধিক চিঠি দিয়েছিলাম। তাই আপনাদের কাছে আহ্বান এইসব ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। আমি সরাসরি রাজনীতি সঙ্গে সম্পৃক্ত না; তবুও ভুক্তভোগী হিসেবে অনেক সময় রাজনীতির মাঠে আসতে ইচ্ছে করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমাদের নয়জন কর্মকর্তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। দুই মাস জেলে আটকিয়ে রাখা হয়। তাদেরকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ানো হয়েছে। এমনকি হত্যা মামলারও সাক্ষী দেওয়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিছু কিছু মানুষকে আট-নয় মাস জেলে রেখেছে। ব্যবসায়ীরা এর যদি পুনরাবৃত্তি চান; তাহলে আবার তত্বাবধায়ক সরকার আনতে পারেন। তবে আমি নিশ্চিত আপনারা কেউ চান না আবার সেই সরকার আসুক।’
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি নিয়ে প্রথম কাজ করছেন। গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযুদ্ধ ভাতা হিসেবে ৫ কোটি মানুষকে ভাতা দিয়েছেন। বছরে ৫৭ হাজার কোটি টাকার ভাতা দিয়েছেন। এর সুফল ভোগ করছে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী। তাই অনেকে বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার দরকার বারবার। আমি মনে করি এক সময় বঙ্গবন্ধুর কোন বিকল্প ছিল না। তেমনই আজ শেখ হাসিনার বিকল্প শুধু শেখ হাসিনাই।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সবসময় শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে চান। শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করে দেশকে এগিয়ে নিতে চান। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য রাজনীতির নামে আগুন সন্ত্রাস, হরতাল, অবরোধ আর পদ যাত্রার মিছিল চলে। আমার অনুরোধ, মিটিং করুক, মিছিল করুক, কিন্তু জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে কোন রাজনীতি হতে পারে না। সব রাজনীতির মূল লক্ষ্য অর্থনীতি। গণতন্ত্র মানে এই নয় যে, আপনি যা করবেন তাই। মানুষের জানমাল রক্ষা করতে হবে। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হবে।‘
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘একসময় বলা হতো বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। এখন বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার বাংলাদেশ বলা হয়। শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের ব্র্যান্ড। সারাদেশ এবং বিশ্ব থাকিয়ে থাকে কী এমন যাদু তার কাছে! কোন যাদুর কাঠি আছে যেটা দিয়ে তিনি সারা বিশ্ব আকর্ষণ করেন। সারা বিশ্বের তিনি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন।’
ট্যাক্স অফিসারকে জুডিসিয়াল ক্ষমতা দেওয়ার প্রসঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। তবে আমি মনে করি, এই দেশের চার কোটি মানুষ কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু সরকার কর পায় মাত্র ৩০ লাখ মানুষের। সমাজের যারা বিত্তবান তাদের দরজায় দরজায় যাওয়া দরকার। এ জন্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা দরকার। সরকার, জনগণ এবং ব্যবসায়ীদের হাতে হাত রেখে চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টার ১৮ ঘণ্টা দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন জানিয়ে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, ‘৬ ঘণ্টা হয়তো বাবা-মা-ভাইবোন সবার কথা ভাবতে হয়। আপনাকে বিনিদ্র রজনীও কাটাতে হয়। আমরা যদি সেই সব চিন্তা করি তাহলে ঘর থেকে বের হতাম না। আপনার দুঃখ আমরা শেয়ার করতে পারবো না, কিন্তু আমরা সবাই, সারা বাংলাদেশের মানুষ বলি, আপনি বঙ্গবন্ধুর যে প্রতিশ্রুতি তা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ তা বুঝবে এবং আগামী দিনে তার ফল পাবে।’
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদ্মাসেতুর নানা সুবিধার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এই সেতু নিয়ে কত রকমের ষড়যন্ত্র হয়েছে। তারপরেও আমাদের নেত্রী সাহসের সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছেন। আল্লাহ ওনাকে দীর্ঘজীবী করুন। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ওনার বিকল্প শুধু উনি। আপনারা সবাই ওনার জন্য দোয়া করবেন।’