প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৩ ১৩:৫৩ পিএম
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৩ ১৩:৫৩ পিএম
রাজধানীর কারওয়ান বাজার সিএ ভবন অডিটোরিয়ামে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘মনিটরি পলিসি অ্যান্ড ইমপ্লিকেশন’ বিষয়ে গোলটেবিল আলোচনা সভা। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেছেন, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মার্কেটিং আরও ডিজিটাল করা দরকার। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে যে রকম প্রতিদিন কেনাকাটা হয়, সে রকমভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত বন্ড ও ট্রেজারি বিলের লেনদেনের সুযোগ দেওয়া। এতে সবাই আরও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করতে পারত বলেও জানান তিনি।
গতকাল রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার সিএ ভবন অডিটোরিয়ামে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘মনিটরি পলিসি অ্যান্ড ইমপ্লিকেশন’ বিষয়ে গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আতিউর রহমান বলেন, অনেক দিন ধরে বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। প্রতিবারই মুদ্রানীতিতে বিশ্ব অর্থনীতির একটি পর্যালোচনা থাকে। মূল্যস্ফীতি শেষ পর্যন্ত মুদ্রাজনিত বিষয়। এই সংকটের সময় ডলার সরবরাহ আরও বাড়ানো দরকার। তাহলে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি বলেন, ‘ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ডে আমরা সবাই যদি আরও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করতে পারতাম, তাহলে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা সম্ভব হতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত বন্ড ও ট্রেজারি বিলের মার্কেটিং আরও ডিজিটাল করা। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের মতো সুযোগ দেওয়া উচিত।’
সরকারি ঋণ প্রসঙ্গে সাবেক এই গভর্নর বলেন, মনিটরি পলিসিতে অভ্যন্তরীণ ও বেসরকারি খাতের ঋণ কিছুটা কমানোসহ সরকারি ঋণ ৩ শতাংশের মতো বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও সরকারের ঋণ বাড়ানোর আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত হয়তো এটি বাস্তবায়ন হবে না। কারণ নির্বাচনের বছর দুই ধরনের প্রবণতা থাকে। একটি হলো জনগণের জন্য অনেক বেশি খরচ করা হয় এবং অন্যটি নির্বাচনের আগে তিন-চার মাস বড় কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় না।’
অনুষ্ঠানে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি ও কাউন্সিল সদস্য মো. হুমায়ুন কবির। এ ছাড়া প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) সিইও ফেরদৌস আরা বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মাহবুব আহমেদ, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, জেবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা আবদুল হক, আইসিএবির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. জামালউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশে খেলাপি ঋণ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। তবে বেনামি ঋণ কত তা নিয়ে কেউ লেখে না। বেনামি ঋণের বোঝা ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত বছর দেশে ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি আমদানি করা হয়েছিল। তবে চলতি বছর লাগবে ১০ বিলিয়ন ডলার। আমদানিনির্ভর জ্বালানি দিয়ে এ দেশের ইন্ডাস্ট্রি খাতের উন্নয়ন হবে না। রাষ্ট্রের বোঝা ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না। শিল্প খাতের ওপর অনেক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিছু লোক বিদ্যুৎ খাতে ব্যবসা করে রাতারাতি বিলিয়নেয়ার হয়ে গেছেন। এসব লোকের হাতে দেশ ছেড়ে দিলে যতই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন, তাতে কোনো লাভ হবে না।
আলোচনায় আইসিএবি সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন সংকটের মধ্যেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এই মুদ্রানীতিতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার মূল চ্যালেঞ্জ হলো অর্থ সরবরাহকে কঠোর করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। গত দুই বছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ ভূরাজনৈতিক সংকটের কারণে বর্তমান বিশ্ব একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। পণ্যের বাজার ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠেছে।