ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৩ ০৮:৩১ এএম
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৩ ১১:২১ এএম
আগর ফ্রেগরেন্স কারখানার ভেতরের এমন দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রবা ফটো
শিল্পকারখানা যেমন দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তেমনি অনেক কারখানা আবার পরিবেশ দূষণেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এ কারণেই ‘সবুজ কারখানা’-এর ধারণা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সবুজ কারখানার এ ধারণায় বাংলাদেশ এখন অনেকটাই এগিয়ে। আর এই উদ্যোগে যুক্ত হতে চলেছে দেশের আরও একটি কারখানা। মৌলভীবাজারে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন) শিল্পনগরীতে শতভাগ রপ্তানিমুখী আতর তৈরির প্রতিষ্ঠান আগর ফ্রেগরেন্সকে সবুজ কারখানা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
দেশি-বিদেশি ফুলসহ নানা জাতের গাছপালা দিয়ে ঘেরা মনোরম পরিবেশ। বিসিক শিল্পনগরীর আতর তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘আগর ফ্রেগরেন্স’-এ ঢুকলে মনেই হয় না এটি কোনো কারখানা। ১০ জাতের অর্কিড আর ৫০ জাতের দুই শতাধিক ফুল ও অন্যান্য গাছ রয়েছে কারখানা এলাকায়। চারপাশের সবুজ গাছগাছালি পুরো পরিবেশকে করে তুলেছে মোহনীয়। কারখানার পশ্চিম পাশের সীমানা দেয়াল লাগোয়া প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার রেলিংয়ে স্থাপন করা হয়েছে শতাধিক আকর্ষণীয় টব। এসব টবে শোভা পাচ্ছে নানা জাতের, নানা রঙের অর্কিড ও দেশি-বিদেশি ফুলগাছ। ফুলের মধ্যে রয়েছে হলুদ জুঁই, বোগেনভেলিয়া, অ্যারেকা পাম, মালাগা, মার্বেলা, পাইন, মানি প্ল্যান্ট, অপরাজিতা, এডেনিয়াম, ক্যাকটাস, দোপাটি, গ্লাডিওলা, ফ্রিজিয়া, লরেল, গোলাপ, পাতাবাহার, ক্যালামাস ইত্যাদি। মৌলভীবাজারের একমাত্র সবুজ কারখানাটি দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন ভিড় করছেন এখানে।
প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে ‘আগর ফ্রেগরেন্স’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আক্তার হোসেন মিন্টু বলেন, ‘আমাদের এ প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে মৌলভীবাজারের বিসিক শিল্পনগরীতে গড়ে তোলা হয়। প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের পর, কারখানা চালুর আগেই কারখানাটিতে সবুজায়নের কাজ শুরু হয়। ওই সময়ে কারখানার চারপাশে রোপণ করা হয় নানা জাতের গাছ। এমনকি দ্বিতল ভবনের দেয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় লতানো ফুলের গাছ। মূল গেটে রোপণ করা হয় বোগেনভেলিয়া। কারখানার ভেতরে-বাইরে রয়েছে দুই শতাধিক গাছপালা। কারখানার শেষ প্রান্তে প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার রেলিংয়ে শতাধিক টব স্থাপন করে রোপণ করা হয় নানা জাতের অর্কিডসহ দেশি-বিদেশি ফুলগাছ। পুরো কারখানাটিই গাছপালায় ঘেরা। যেন সবুজের এক মেলা। দূর থেকে সবুজ গাছপালা দেখে মনে হবে যেন কারখানা নয়, এটি নার্সারি। কারখানার ভেতরে টবে রয়েছে বিশেষ কিছু গাছ। এ গাছগুলো আলো-বাতাস ছাড়াই বেড়ে ওঠতে পারে। আমরা মনে করি, কারখানার গাছ শুধু সৌন্দর্যবর্ধন করে না, ব্যবসার উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। ব্যবসার সঙ্গে পরিবেশের কথাও ভাবতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারখানার সবুজায়নের কাজ শেষের পথে। সবুজ কারখানা পরিবেশকে রক্ষা করে। তাই আমাদের চাওয়া দেশের প্রতিটি শিল্পকারখানা হোক সবুজ।’
‘আগর ফ্রেগরেন্স’ দেখতে আসা লেখক-কলামিস্ট এহসান বিন মুজাহির বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলায় এমন গাছপালায় ঘেরা কারখানা এই প্রথম দেখলাম। খুব ভালো লাগল। চারদিকে সবুজ, এমন মনোরম পরিবেশ শ্রমিকদের কাজের গতি বাড়াবে নিঃসন্দেহে। সেই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণে কারখানাটি ভূমিকা পালন করে চলেছে।’
আগর ফ্রেগরেন্সের চেয়ারম্যান জিয়া হায়দার মিঠু বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় সারা বিশ্বে এখন সবুজ কারখানা হচ্ছে। বাংলাদেশেও অসংখ্য সবুজ কারখানা রয়েছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোর অধিকাংশই সবুজায়নের দিকে ঝুঁকছে। আমরা যখন মৌলভীবাজারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি, তখন প্রথমেই আমাদের ভাবনায় ছিল সবুজ কারখানা গড়ে তোলার। আমাদের কারখানার প্রতিটি ইউনিটে গাছপালা রোপণ করেছি। পরিপূর্ণ সবুজ কারখানা তৈরির কাজ এখনও চলমান। কারখানাটি পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। আমরা আমাদের কারখানার পাশাপাশি জেলার আরও কিছু শিল্পকারখানাকে সবুজায়ন করতে উদ্বুদ্ধ করছি।’