প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৩ ২১:১৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
নিত্যপণ্যের সংকটে প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে ভারত থেকে ছয়টি পণ্য আমদানির নিশ্চয়তা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত সরকার এখনও নিজের দেশের চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। তাই শিগগিরই বাংলাদেশকে এই আমদানিপণ্যের নিশ্চয়তা দিতে চাইছে না ভারত। চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে ছয়টি নিত্যপণ্যে প্রতি বছর ৫২ লাখ ৫০ হাজার টন পণ্য আমদানিতে কোটা চেয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টন গম। তবে ভারতের পক্ষ থেকে কোটা সুবিধা দেওয়া অবশ্য নতুন কিছু নয়। তারা এর আগে প্রতিবেশী ভুটান ও মালদ্বীপকে এ ধরনের কোটা দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী, গত মার্চেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় পণ্য আমদানিতে কোটা চেয়ে চিঠি পাঠায়। এর মধ্যে চাল ১৫ লাখ টন, গম ২০ লাখ টন, চিনি ১০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৬ লাখ টন, আদা ১ লাখ টন ও রসুন ৫০ হাজার টন।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছিল, চালের কোটায় ৮ থেকে ১০ লাখ টন আমদানি করা হবে সরকারিভাবে। বাকিটা আমদানি করবে বেসরকারি খাত। আর গমের কোটায় সরকার ৫ থেকে ৭ লাখ টন আনবে, বাকিটা আসবে বেসরকারিভাবে। বাকি চার পণ্যের ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কে কী পরিমাণ আমদানি করবে, তার কোনো ব্যাখ্যা সেখানে নেই।
জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভারত সরকার ইতোমধ্যেই চিনি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। এখন কোটার আওতায় ছয়টি পণ্যের আমদানির নিশ্চয়তা দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমি আশা করি ভারতের নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল হলেই আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করবে। তবে ছয়টি পণ্যের কোটা চাহিদার বিষয়টি গত মার্চ মাসে আমরা ভারতকে জানিয়েছি।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় অবশ্যই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর ভারত সরকাররে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত সংস্থার নিষেধাজ্ঞা আরও এক বছর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল। তবে এ সময়ের মধ্যেও যেকোনো সময় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতে পারে বলেও সরকারি নির্দেশনায় জানানো হয়েছে। এ ছাড়া গত বছর ভারত সরকার পেঁয়াজ, গম এবং ভাঙা চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আবার উঠিয়ে নেয়।
ভারত থেকে নিত্যপণ্য আমদানিতে কোটার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ অবশ্য আরও সাড়ে পাঁচ মাস আগে আলোচনা করেছে। ভারত হঠাৎ করে একবার পেঁয়াজ, আরেকবার গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বাংলাদেশ খুব চাপে পড়ে। একে ভিত্তি ধরেই গত ২২-২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে উল্লিখিত ছয়টি নিত্যপণ্যসহ ডাল আমদানিতে কোটা চেয়েছে বাংলাদেশ।
তখন চালে ২০ লাখ টন, গমে ৪৫ লাখ টন, পেঁয়াজে ৭ লাখ টন, চিনিতে ১৫ লাখ টন, আদায় দেড় লাখ টন, ডালে ৩০ হাজার টন ও রসুনে ১০ হাজার টনের কোটা চাওয়া হয়। জবাবে ভারত ওই বৈঠকেই জানিয়ে দেয়, পণ্য তারা বিক্রি করবে, কোটাও রাখতে রাজি। তবে পরিমাণটা অতি জরুরি। সে অনুযায়ী তারা কোন পণ্যের জন্য কী পরিমাণ কোটা লাগবে, তা সুনির্দিষ্ট করে জানাতে বলেছে বাংলাদেশকে। কারণ আগের কয়েক বছরের পরিসংখ্যানের হিসাবে বছরে এত পণ্য আমদানির দরকার পড়বে না বাংলাদেশের। বৈঠক থেকে ফিরে এসে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর পরই পণ্যের চাহিদা নির্ণয় করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মো. মাহবুবুল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটিতে খাদ্য, কৃষি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়।
ওই কমিটি ভারত থেকে গত ১০ বছরে পণ্য আমদানির চিত্র বিশ্লেষণ শেষে ছয় পণ্যের মোট পরিমাণ ও পণ্যওয়ারি পরিমাণ নির্ধারণ করে। ডালের ব্যাপারে শুরুর দিকে কোটা চাওয়া হলেও চূড়ান্ত চিঠিতে সেটাকে বাদ রাখা হয়েছে। কারণ ভারত ডিসেম্বরের বৈঠকেই জানায় যে নিজেদের চাহিদার কারণেই ডাল রপ্তানি তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত থেকে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। তার আগের অর্থবছরে দেশটি থেকে আমদানি করা হয় ৮৫৯ কোটি ডলারের পণ্য।