ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৩ ১৩:২৯ পিএম
দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলায় কোরবানির জন্য গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ প্রকৃয়া চলছে। প্রবা ফটো
আর কিছুদিন পরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। সেই উৎসবকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গবাদিপশু লালন-পালন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার গবাদিপশু খামারিরা।
এ বছর কোরবানিতে উপজেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ১৩ হাজার ১০০টি। কিন্তু পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে ১৯ হাজার ৫০০টি। ফলে উপজেলার চাহিদা মিটিয়েও অতিরিক্ত ৬ হাজার ৪০০ পশু দেশের অন্য এলাকার চাহিদা মেটাবে। প্রস্তুতকৃত পশুর মধ্যে বেশিরভাগই দেশীয় গরু, ছাগল ও ভেড়া।
এদিকে কয়দিন পরই পুরোদমে শুরু হবে কোরবানির পশুর হাট। যেখানে বেচাকেনা হবে কোরবানির গরু, ছাগল ও ভেড়া। স্থানীয় খামারিরা কোরবানির বাজার ধরতে গরু মোটাতাজাকরণসহ পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গোখাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় এ বছর গবাদিপশুর দামও গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হবে বলে দাবি খামারিদের। বেশি দামে বিক্রি করতে না পারলে লাভ তো দূরের কথা, লোকসান গুনতে হবে তাদেরকে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পৌর এলাকাসহ ৭টি ইউনিয়নে ২৬১টি গরু মোটাতাজাকরণ (হৃষ্টপুষ্টকরণ) খামার রয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত খামার ৪টি এবং অনিবন্ধিত ২৫৭টি। একইভাবে ছাগলের খামার রয়েছে ১১১টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত খামার রয়েছে মাত্র ১টি এবং অনিবন্ধিত ১১০টি। ভেড়ার খামার রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে একটি নিবন্ধিত হলেও ১৮টিই অনিবন্ধিত। এসব পশুর খামার থেকে চলতি বছর ১৯ হাজার ৫০০টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ১২০টি গরু, ৬ হাজার ৬২১টি ছাগল, ৮টি মহিষ ও ৭৬২টি ভেড়া রয়েছে।
সরেজমিনে পৌর শহরের স্বজন পুকুর এলাকার আমিন ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, গরু পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারের লোকজন। ফার্মের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন বলেন, খামারে ক্রস ব্রাহামা, ফ্রিজিয়ান, নেপালি, হরিয়ানা ও দেশিসহ উন্নত জাতের প্রায় ৫০টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে কোরবানির জন্য ২৫টি গরু প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ভুট্টা, খৈল, কাঁচা ঘাস, গমের ভুসি ও খড় দেওয়া হয়। শখের বশে অন্য ব্যবসার পাশাপাশি এ বছর প্রথম গবাদিপশুর খামার শুরু করেছেন রুহুল আমিন। আগামীতে এটিকে একটি বড় আকারের খামারে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। খামারের পশুগুলোকে প্রতিদিন গোসল করানোসহ থাকার জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও সার্বক্ষণিক বৈদ্যুতিক ফ্যানের বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে।
উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামে ইটভাঁটা ব্যবসায়ী ইব্রাহীম খলিলের গরুর খামারে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ দিয়ে বানানো ওপরে মোটা ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ৯টি সেটে ছোট, বড়, মাঝারি সাইজের সাড়ে আটশ দেশি গরু রয়েছে। খামারের ম্যানেজার নজমুল হক বলেন, এ বছর সবেমাত্র খামার শুরু করা হয়েছে। আসন্ন কোরবানিতে অন্তত ১৫০টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামীতে অন্তত দেড় হাজার গরুর খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞানসম্মতভাবে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ ও প্রাকৃতিক উপায়ে পশু লালন-পালন ও বাজারজাতকরণের বিষয়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে খামারিদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। গবাদিপশুকে দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভিটামিনও খাওয়াতে বলা হচ্ছে। তবে গরুকে নিষিদ্ধ কোনো কেমিক্যাল কিংবা হরমোনিক ওষুধ না খাওয়ানোর জন্য বলা হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে গবাদিপশুকে ভালো খাদ্য কীভাবে খাওয়ানো যায় এবং কীভাবে মানসম্মত মাংস উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে খামারিদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর কোরবানির চাহিদার ৬ হাজার ৪০০ পশু বেশি প্রস্তুত রয়েছে ফুলবাড়ীতে।