× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শেষ সময়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তাড়াহুড়ো

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩ ২১:৩৯ পিএম

পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ। ছবি : সংগৃহীত

পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ। ছবি : সংগৃহীত

অর্থবছরের শুরুতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে খুবই ধীরগতি থাকলেও তাড়াহুড়ো শুরু হয় অর্থবছরের শেষে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বাকি এক মাসে ৩৮ দশমিক ২৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য খরচ করতে হবে ৯০ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। তাই শেষ সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে তাড়াহুড়ো করে কাজ করবে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো।

আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতি অর্থবছরেই একই চিত্র থাকে। অর্থবছরের শুরুতে জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ১, ২ বা ৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়। আর অর্থবছরের শেষ মাস জুনে এডিপি বাস্তবায়ন হয় ২৫ শতাংশের বেশি। গত অর্থবছরের জুন মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৭.৯০ শতাংশ। খরচ হয়েছিল ৬১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তার আগের দুই বছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৩ শতাংশের বেশি। করোনার আগে ২০১৮-১৯ সালে জুন মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৬.৬৯ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে হয়েছিল ৩১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরেও একইভাবে লক্ষ্য পূরণে ২৫ শতাংশের বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। তার জন্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে শুরু হয়েছে তাড়াহুড়ো।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি অর্থবছরেই একই চিত্র দেখা যায়। অর্থবছরের শুরুতে কাজে ধীরগতি থাকে আর শেষে তাড়াহুড়ো করা হয়। তখন দেখা যায় কাজের মান খারাপ হয়, তদারকি থাকে না। ফলে ব্রিজ নির্মাণ করলে দেখা যায় তিন মাস পরই ভেঙে পড়ে। রাস্তা করলে দুই মাস পর ঢালাই উঠে যায়।’

রবিবার (১৮ জুন) চলতি অর্থবছরের মে মাসের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। চলতি অর্থবছরের মে মাসের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা করোনার সময় ছাড়া গত পাঁচ বছর অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের চেয়ে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ কম বাস্তবায়ন হয়েছে চলতি অর্থবছরে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল ৬৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৮ দশমিক ৩৬, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৭ দশমিক ৩৭ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল।

তবে সামগ্রিক অগ্রগতি কম হলেও মাসের হিসাবে মে মাসের এডিপি বাস্তবায়নের হার চলতি অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি ২০১৮-১৯ অর্থবছর ছাড়া গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে শুধু সর্বোচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মে মাসে। 

আইএমইডির প্রতিবদেন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুধু মে মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে একই সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ দশমিক ২৭, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২৪ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ১৩ দশমিক ০৩ শতাংশ।

মে মাসের আগে চলতি অর্থবছরের কোনো মাসে এত এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। অর্থবছরের শুরুর মাস অর্থাৎ জুলাই মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগস্টে ছিল ২ দশমিক ৮৯, সেপ্টেম্বরে ৪ দশমিক ৭১, অক্টোবরে ৪ দশমিক ০৯, নভেম্বরে ৫ দশমিক ৭৭, ডিসেম্বরে ৫ দশমিক ১৩, জানুয়ারিতে ৪ দশমিক ৬৩, ফেব্রুয়ারিতে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে মার্চ থেকে বাস্তবায়ন হার বাড়তে থাকে। মার্চে বাস্তবায়ন হয় ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ, এপ্রিলে বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এডিপি আওতাভুক্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উচ্চ অগ্রাধিকার, অগ্রাধিকার ও কম অগ্রাধিকার হিসেবে বাছাই করে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এবং কিছু প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় খাত বাদ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে অর্থবছরের হিসেবে বাস্তবায়ন হার কম দেখাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘তারপরও তুলনামূলক খুব একটা খারাপ না। গত অর্থবছর থেকে যাতে না কমে সেজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। বাস্তবায়ন হার গত অর্থবছরের কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থবছরের শেষ দিকে বাস্তবায়ন হার একটু দ্রুত বাড়ে, কারণ শেষ দিকে হিসাব-নিকাশ করে ফাইনাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ কারণে শেষ দিকে বাস্তবায়ন হারে গতি বাড়ে।’

হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা গেছে, মে মাস পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ করেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২১ কোটি টাকা। আর শুধু এপ্রিল মাসে খরচ হয়েছে ২৬ হাজার ৯৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের মে মাসে খরচ হয়েছিল ২০ হাজার ৮৯৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। 

এডিপি বাস্তবায়নে সব থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। এখন পর্যন্ত তাদের বাস্তবায়ন মোট বরাদ্দের ৯৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থা থাকা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৯২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আইএমইডি ৮৪ দশমিক ৫২, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮২ দশমিক ০৬ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ ৮১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এ ছাড়া ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৭৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, শিল্প মন্ত্রণালয় ৭৭ দশমিক ৭৩, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৭৬ দশমিক ৪১, বিদ্যুৎ বিভাগ ৭৩ দশমিক ৪১, শ্রম ও কর্মসংস্থান ৭২ দশমিক ৪৬, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৭১ দশমিক ৪৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।

বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক হলেও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন কচ্ছপগতিতে চলছে। এমনকি ১০ মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ৪০ শতাংশের কম বাস্তবায়ন করেছে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে অন্যতম অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়। এক মাস বাকি থাকলেও এসব মন্ত্রণালয় ৪০ শতাংশও খরচ করতে পারেনি। 

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সরকার ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল। গত ১ মার্চ তা সংশোধন করে প্রকল্প সহায়তা থেকে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এডিপিতে মোট ১ হাজার ৬৮৩টি প্রকল্প রয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা