মৌলভীবাজার প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩ ০৯:৩৪ এএম
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৩ ২১:৪৪ পিএম
চা-বাগানের ছায়া দানকারী বৃক্ষগুলোতে গোলমরিচ গাছ (বাঁয়ে)। ডানে ওপরে গোলমরিচ গাছে ফল ও নিচে গাছ বেয়ে বেড়ে উঠেছে গোলমরিচের লতা। প্রবা ফটো
মাংসসহ অনেক রান্নার প্রায় অপরিহার্য মসলা গোলমরিচ। ঔষধি গুণের জন্যও বিশিষ্ট। এই কৃষিপণ্যের প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও মৌলভীবাজারে রয়েছে চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা।
জেলার রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, বড়লেখা ও কমলগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন চা-বাগানে সাথি ফসল হিসেবে রসনাদার গোলমরিচ সীমিত পরিসরে উৎপাদন হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে রাজনগর ও শ্রীমঙ্গলে।
চা-বাগানের জন্য অত্যাবশ্যক ছায়াদানকারী বৃক্ষ। সেই বৃক্ষকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে গোলমরিচ-লতা। Piperaceae পরিবারের এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Piper nigrum; ইংরেজিতে black pepper; যা দেখতে অনেকটা পান-লতার মতো। চারা রোপণের তিন-চার বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু করে। একটি পূর্ণ গোলমরিচ গাছ দুই দশক পর্যন্ত ভালো ফল দেয় মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান।
লতানো গোলমরিচ গাছে লম্বা গুচ্ছে ছোট হলুদ রঙের ফুল ফোটে এবং ফল আসে। ডিসেম্বরের শেষদিকে ফল লাল হয়। তখন সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে চার-পাঁচ কেজি গোলমরিচ সংগ্রহ করা যায় বলে জেলার চাষিরা জানান। গাছ থেকে ফল সংগ্রহের পর ফলগুলো গুচ্ছ থেকে আলাদা করে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করতে হয়। এরপর প্রায় এক সপ্তাহ রোদে শুকানোর পর তা বাজারজাত বা খাওয়ার উপযুক্ত হয়।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় বেশকিছু চা-বাগানে প্রায় ১০০ হেক্টর, গ্রাম ও পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন বাড়িতে আরও প্রায় পাঁচ হেক্টর জমিতে গোলমরিচের চাষ হচ্ছে। রাজনগর উপজেলার রাজনগর চা-বাগানের কর্মকর্তারা জানান, তারা প্রায় ২৩ বছর ধরে বাগানের বাংলো এলাকায় গোলমরিচের চাষ করছেন। এখান থেকে প্রতিবছর প্রায় এক মণ গোলমরিচ বিক্রি হয়। তাদের বাগানে গোলমরিচের চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে তারা জানান।
কৃষি কর্মকর্তা সামছুদ্দিন আহমদ বাংলাদেশে গোলমরিচ চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘রাজনগর, শ্রীমঙ্গলসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি চা-বাগানে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে গোলমরিচ। চা-বাগানগুলোতে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে গোলমরিচের চাষাবাদ হচ্ছে। এ জেলার আবহাওয়া ও মাটি মসলাজাতীয় ফসল চাষের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী।’
আমাদের দেশে গোলমরিচ চাহিদার প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মৌলভীবাজারে বাণিজ্যিকভাবে গোলমরিচ চাষ করলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদার কিয়দংশ মেটানো সম্ভব। যেসব চা-বাগানে গোলমরিচের চাষ হচ্ছে, আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
তিনি বলেন, ‘গোলমরিচ পরাশ্রয়ী ও লতাজাতীয় উদ্ভিদ বিধায় খুব সহজে এ মসলার চাষ করা যায়। বাড়িতে যেকোনো গাছের গোড়ায় চাষ করা যায়। খুব একটা পরিচর্যা ছাড়াই রোপণের তিন বছরের মধ্যে ফসল পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছ দুই দশক পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। গড়ে একটি গাছে দেড় থেকে দুই কেজি শুকনো গোল মরিচ পাওয়া যায় প্রতিবছর।’