প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩ ২০:১৫ পিএম
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ। ছবি: সংগৃহীত
আমরা বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি বলে মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. এমএ রাজ্জাক। মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাজধানীর বনানীতে পিআরআইয়ের সম্মেলনকক্ষে বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।
ড. এমএ রাজ্জাক বলেন, ‘গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিদেশি উৎস থেকে লোন নেওয়ার পরিমাণ ২০৮ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া বিদেশি ঋণের সুদের হারও বেড়েছে। বিদেশি ঋণের সুদ ৯৩ বিলিয়ন টাকা দিচ্ছি, যা আগামী বছর হবে ১২৪ বিলিয়ন টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছি। দেশি ঋণের সুদসহ বিশাল একটি অর্থ ব্যয় করতে হবে সরকারের।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকার মূল্যস্ফীতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাজেট বক্তৃতায়। এটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা বাজেটে নেই। সামনের মুদ্রানীতিতে মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সুদের হার কমাতে হবে।’
এমএ রাজ্জাক বলেন, ‘যদি ডলারের মূল্যের সঙ্গে ১ টাকা অবমূল্যায়ন হয়, তাহলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সেক্টরের ভর্তুকির পরিমাণ ৪৭০ কোটি টাকার ওপরে বাড়বে। এ ব্যাপারে একটি উদ্বেগ আছে। এ ছাড়া সরকারের বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণেও প্রভাব পড়বে। তাই সরকারের রাজস্ব ব্যয়, বৈদেশিক মুদ্রা, মূল্যস্ফীতির ব্যবস্থাপনাÑ এ তিনটি জিনিস নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এগুলো মিলে বড় ধরনের চাপ তৈরি করতে পারে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ আশঙ্কাজনক অবস্থায় নেই। তবে বিচক্ষণভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করা দুরূহ হয়ে পড়বে বলে মনে করে পিআরআই।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ও আদায়ে বিশাল গ্যাপ থেকে যাচ্ছে। আমরা মনে করছি, এনবিআরের কর-জিডিপি অনুপাত এ বছর ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। এ ছাড়া আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী জিডিপি পরবর্তী বছরে দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হলে এনবিআরকে কমপক্ষে চার লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে।
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ বাজেটে ঘাটতি অনেক বেশি। বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে কাটছাঁট করতে হবে। এবারের বাজেটে মোটা দাগে তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জ তিনটির প্রথমটি হলো রাজস্বনীতি। সরকার যে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্র নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। দ্বিতীয়টি মুদ্রানীতি আর তৃতীয়ত হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।’
এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনটি পরামর্শ দেওয়া হয় সরকারকে। সেগুলোর প্রথমটি হলো বাজেটে ঘাটতি কমাতে হবে। তার জন্য সরকারি খরচ কমাতে হবে। পাশাপাশি সরকারের নেওয়া বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প কমাতে হবে। দ্বিতীয় পরামর্শটি হলো মূল্যস্ফীতি। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আনার যে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার, তা বাস্তবায়ন করতে হলে ব্যাংকঋণের সুদের হার কমাতে হবে। তৃতীয়টি হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। রিজার্ভ ভালো রাখতে হলে ডলারের মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। সরকারকে মুদ্রানীতি নিয়ে কাজ করতে হবে এবং ডেফিসিট উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, ‘পাবলিক সেক্টরে পুরো বিনিয়োগ ঋণ করা অর্থে করা হয়েছে। ফলে সরকারের সেভিংস নেই।’
এ সময় পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সাপ্লাই সাইড থেকে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। সমস্যা সমাধানে ট্রেড অফকে কাজে লাগাতে হবে।’