প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩ ২০:০১ পিএম
আপডেট : ১২ জুন ২০২৩ ২০:৪২ পিএম
অর্থনৈতিক নীতির অভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে কমছে না। বর্তমান সংকটে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বা অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় কমিয়ে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো উচিত। বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ সাদিক আহমেদ এক সেমিনারে এমন মতামত দেন। সোমবার (১২ জুন) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের চ্যালেঞ্জ নামে এ সেমিনার হয়। উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস আগারগাঁও তাদের কার্যালয়ে সেমিনারটি আয়োজন করে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ।
সাদিক বলেন, ’ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা নীতির অভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। করোনাভাইরাস ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মতো কারণগুলোর কথা বলছে সরকার। কিন্তু এর মধ্যেও অন্যান্য দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে।’
তিনি বলেন, ’যেসব দেশ সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে চাহিদা কমানোর নীতি গ্রহণ করেছে, তারা সকলেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। সরকার আমদানি কমিয়ে রিজার্ভের ওপর চাপ কমিয়েছে। কিন্তু আমদানি কমায় রিজার্ভের ভারসাম্যে উন্নতি হলেও জিডিপি বৃদ্ধি কম হয়েছে। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বলে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ সাময়িক সুবিধা দিলেও টেকসই সমাধান নয়। উপরন্তু এই ব্যবস্থাগুলো মূলধনে উল্লেখযোগ্য অবনতি রোধ করতে পারেনি। কারণ প্রত্যক্ষভাবে বিদেশি বিনিয়োগ প্রসারিত হয়নি।’
ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ঘাটতি এবং সেই ঘাটতির জন্য ব্যাংকিং অর্থায়নের ওপর নির্ভর করা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, ’আগামী অর্থবছরের বাজেটকে চারটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে : সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা, রাজস্ব সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ, বাজেট ঘাটতির বিচক্ষণ অর্থায়ন, সামাজিক খাতে ব্যয় রক্ষা।‘
সাদিক বলেন, ’সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বাজেট সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটের গভীরতা অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং গত বাজেটের মতো আগামী বাজেটেও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নয়, বরং প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করেছে।’
তিনি বলেন, ’সরকারের রাজস্বের প্রধান উৎস কর। প্রতিবছর সরকার উচ্চাভিলাষী করের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে, যা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। কয়েক বছর ধরে করকাঠামো সংস্কার করতে না পারায় রাজস্ব সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য কর পরিকল্পনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন জড়িত।’
তিনি বলেন, ’উচ্চ মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিবেশে সরকারকে দেশীয় ঋণের প্রবৃদ্ধি কমাতে হবে। বাজেট ঘাটতির জন্য ব্যাংকঋণ কমাতে হবে। স্বল্পমূল্যের বিদেশি ঋণ এবং বাজারভিত্তিক দেশীয় ঋণের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি করতে হবে।’ বর্তমান সংকটকালে অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যয় কমিয়ে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সাদিক বলেন, ’এটা করতে পারলে মূল্যস্ফীতি কমার পাশাপাশি দরিদ্র ও দুর্বলদের আয়ের উন্নতির মাধ্যমে সরকার রাজনৈতিকভাবে উপকৃত হতে পারে। বড় বড় অবকাঠামোতে ব্যয় বৃদ্ধি নির্বাচনী বছরে রাজনৈতিকভাবে আকর্ষণীয় মনে হলেও সংকটের সময় সাধারণ নাগরিকদের সুবিধা দিতে পারে না।’
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্য দেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, ’বাজেট মানে শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়। বাজেট মানে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার।’