প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩ ১৩:৫৩ পিএম
বিশ্বব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত
চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩ দশমিক ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে) অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা কোনো এক বছরে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সর্বোচ্চ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বব্যাংক সফরেই এর মধ্যে ২২৫ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। ইআরডি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৮৫৮ মিলিয়ন ডলার বা ৯ হাজার ১৮০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি হয়েছে সরকারের। এর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্ট্রাপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেসিলেন্স (পার্টনার) প্রকল্পে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পে ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকার অর্থায়ন চুক্তি হয়েছে।
এ ছাড়া গত ২ মে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসের উপস্থিতিতে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনার পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি হয়।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে অভিযোজন ও ঝুঁকি হ্রাসের জন্য ৫০ কোটি ডলারের ‘রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল্ডিং প্রজেক্ট রয়েছে, যা ‘ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নে প্রথম বড় বিনিয়োগ প্রকল্প। এটি অভ্যন্তরীণ বন্যার বিরুদ্ধে দুর্যোগ প্রস্তুতির উন্নয়নে সহায়তা করবে। দ্বিতীয় প্রকল্প ২৫ কোটি ডলার ব্যয়ে বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (বিইএসটি)। এটি বাংলাদেশে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে এবং সবুজ বিনিয়োগে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে সহায়তা করবে। তৃতীয় প্রকল্পটি হলো ৭৫ কোটি ৩৫ লাখ ডলার ব্যয়ে অ্যাকসেলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেকটিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া (এসিসিইএসএস)-বাংলাদেশ ফেজ-১, যা ঢাকাকে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সংযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে।
চতুর্থ প্রকল্প ৫০ কোটি ডলারের ফার্স্ট বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট (জিসিআরডি), যা দেশকে সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে সহায়তা করবে। আর পঞ্চম ও সর্বশেষ প্রকল্প ২৫ কোটি ডলারের সাসটেইনেবল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশনান (এসএমএআরটি)। এটি ক্ষুদ্র শিল্প খাতকে আরও গতিশীল, কম দূষণকারী, দক্ষ এবং জলবায়ু সহনশীল প্রবৃদ্ধির খাতে রূপান্তরে সহায়তা করবে।
এর আগে গত বছরের আগস্টে মহামারি করোনার ধাক্কা সামলাতে বাংলাদেশকে ৩০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার চুক্তি করে বিশ্বব্যাংক। করোনা সংকট মোকাবিলায় ‘লোকাল গভর্নমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি’ প্রকল্পের আওতায় এই অর্থ খরচ হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের ঋণে ১৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প চলমান রয়েছে। বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার অনুদান, সুদমুক্ত এবং ছাড়পত্র প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে এসডিআরে ঋণ গ্রহণ করা হবে এবং গৃহীত ঋণ পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এসডিআরে গৃহীতব্য এ ঋণের উত্তোলিত অর্থের ওপর বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ এবং ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করতে হবে। অনুত্তোলিত অর্থের ওপর বার্ষিক সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি প্রদেয় হবে। তবে বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরসহ দীর্ঘদিন কমিটমেন্ট ফি মওকুফ করে আসছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক এ দেশের জন্য সর্ববৃহৎ বহুপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদার। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও লজিস্টিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমন্বয়, নগরায়ণ এবং ডেল্টা ব্যবস্থাপনা খাতে অর্থ জোগান দিয়ে আসছে।