মানিকগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩ ১৩:৩৫ পিএম
আপডেট : ১০ জুন ২০২৩ ১৪:১৮ পিএম
পাতা কোঁকড়ানো রোগ ও দাবদাহের কারণে মানিকগঞ্জে লোকসানের মুখে মরিচচাষিরা। প্রবা ফটো
মানিকগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচের আবাদ হয় হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলায়। এ অঞ্চলের মরিচ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। ভালো ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার সাড়ে তিনশ হেক্টর বেশি জমিতে মরিচের আবাদ করেন চাষিরা।
কিন্তু পাতা কোঁকড়ানো রোগ ও তীব্র দাবদাহের কারণে মরিচের ফলন কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। এ অবস্থায় কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার না মেলায় উৎপাদন খরচ ওঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে ৩ হাজার ৫৫১ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় সাড়ে তিনশ হেক্টর বেশি। গত বছর প্রায় শতকোটি টাকার মরিচ বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল মানিকগঞ্জ থেকে। এ বছর তীব্র গরম ও সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এই ফলন বিপর্যয় বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
৩৫ বছর ধরে মরিচের আবাদ করে আসছেন শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামের তৈয়ব আলী। এবার দুই বিঘা জমিতে দেশীয় বিন্দু জাতের মরিচ চাষ করেছেন তিনি। চারা কেনা, সার, কীটনাশক, সেচসহ দুই বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন তার জমি থেকে দুই-তিন মণ মরিচ তোলার কথা। কিন্তু এবার ফলন বিপর্যয়ের কারণে জমি থেকে কোনো মরিচই তুলতে পারছেন না। গাছের পাতা মুড়িয়ে যাচ্ছে, ফুলও আসছে না। সার-কীটনাশক-সেচ দিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুফল পাচ্ছেন না।
হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা এলাকার মরিচচাষি শের আলী জানান, ‘আগের বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে সাড়ে চার বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করি। এবার ফলন একেবারেই নাই। বিঘা বিঘা মরিচের গাছ পাতা কোঁকড়ানো রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছের মাথা থুবড়ে গেছে। আগে প্রতি তোলায় যেখানে কয়েক মণ মরিচ পাওয়া যেত। এখন সেখানে কয়েক কেজি পাচ্ছি। এই ঋণ কীভাবে শোধ করব সেই চিন্তায় ঘুম শেষ।’
জেলার অন্যতম মরিচের বড় আড়ত হরিরামপুরের ঝিটকা বাজার। এ আড়ত থেকেই প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় ৫০-৫৫ হাজার কেজি মরিচ। প্রতিদিন এই হাটে ১০ ট্রাক মরিচ আসার কথা এই সময়ে। কিন্তু এখন ৩ থেকে ৪ ট্রাক মরিচ দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে।
ঝিটকা বাজারের আড়তদার মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘এ বছর মরিচের আমদানি আগের চেয়ে চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। আগের বছর প্রতিদিন যেখানে আমি ১৮ থেকে ২০ হাজার কেজি মরিচ কিনেছি, এখন সেখানে ৫ হাজার কেজিও কিনতে পারছি না। বাজারে মরিচের আমদানি কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় শ্রমজীবীরা।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মরিচের আবাদ জুলাই পর্যন্ত থাকবে। উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের সেচ ও সার ব্যবস্থাপনার প্রতি জোর দিতে বলা হয়েছে।