× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সরকারি ১০ প্রতিষ্ঠান ২০৭৯০ কোটি টাকার লোকসানে

জয়নাল আবেদীন

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩ ০৯:৪৭ এএম

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩ ০৯:৪৯ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশের বাজারে ব্যবসা করে যেখানে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো লাভ করছে, সেখানে একই ধরনের ব্যবসা করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দিনের পর দিন লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লোকসান অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। সীমাহীন দুর্নীতি, সঠিক নীতি-কৌশলের অভাব এবং উদাসীনতার কারণেই প্রতিষ্ঠানগুলোর এ দুরবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। 

অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত কিছু প্রতিষ্ঠানের লোকসান গত এক বছরের ব্যবধানে এত বেড়েছে- যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। বিশেষ করে বাণিজ্যিক উপখাত, ইউটিলিটি সার্ভিস ও শিল্প খাতের সঙ্গে জড়িত এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান বেশি বেড়েছে। লোকসান বৃদ্ধির মধ্যে সবার ওপরে আছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এর পরেই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। আবার বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের মতো এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানেও লোকসান বেড়েছে এক বছরের ব্যবধানে অনেকখানি।

সরকারি ৪৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লোকসানে পড়েছে ১০টি। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই দশ প্রতিষ্ঠানের পেছনে ২০ হাজার ৭৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে সরকার। বাকি ৩৯ প্রতিষ্ঠান লাভে থাকায় সার্বিকভাবে লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৩-এর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসান করেছে বিপিসি। ২০২৩ সালের ২৩ মে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি লোকসান করেছে ৭ হাজার ৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। 

অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৫ হাজার ১০৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা লোকসান বেড়েছে। হিসাব বলছে, গত বছর ২৫৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বিপিসির লোকসান।

লোকসানের দিক দিয়ে এরপরই রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৯৬৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা লোকসান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু আগের অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ছিল ৩ হাজার ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত বছর ৩ হাজার ৭২৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা লোকসান বৃদ্ধি পেয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, ১১৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ লোকসান বেড়েছে বিপিডিবির।

গত অর্থবছরে মুনাফা করা রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এখন তৃতীয় সর্বোচ্চ লোকসানি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি মূলত রোজার মাসে ৬টি ভোগ্যপণ্য এবং বছরের অন্য সময় চারটি পণ্য কম দামে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের হাতে তুলে দেয়। টিসিবি ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান করেছে ৫ হাজার ৫৬২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। বছর শেষ হলে এ লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ৮৫৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল।

গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারি যে প্রতিষ্ঠান একবারও লাভের মুখ দেখেনি সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। যদিও প্রতিষ্ঠানটির লোকসান অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো অস্বাভাবিকভাবে বাড়েনি। তবু এ বছর লোকসান হয়েছে ৬৭৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা; যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬১০ কোটি। 

লোকসানের তালিকায় এর পরের অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ২৪৮ কোটি ৪ লাখ টাকা লোকসান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে আরও যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান করেছে তার মধ্যে আছে বিআরটিসি ৮৪.৪৩ কোটি, বিআইডব্লিউটিএ ৭২.৩২ কোটি, বিআইডব্লিউটিসি ৪৯.৩১ কোটি বিএফডিসি ২০.৭৮ কোটি এবং বিটিএমসি ১৬.৬৬ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের জন্য দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন না করাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর ধরে লোকসান করে আসছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটা বড় ধরনের রিভিউ বা পরিবর্তন আনা দরকার। কোনটা কোন পদ্ধতিতে রাখলে ভালো হবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ব্যক্তি মালিকানায় দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে শেয়ার অফলোড করা যেতে পারে। যাতে সরকারের পাশাপাশি জনগণের মালিকানা সৃষ্টি হয়। পরিচালনা পর্ষদে শেয়ারের ভিত্তিতে জনগণের প্রতিনিধিও থাকবে। শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই প্রতিষ্ঠান চালাবে না। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে রাখার দরকার নেই। এগুলো বেসরকারি খাতে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এসব পরিবর্তনের এখন সময় এসেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসান করার একটা কারণ হচ্ছে, পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে উৎপাদন কম হওয়া, দক্ষ জনবলের অভাব, এর পাশাপাশি এগুলো ব্যবস্থাপনায় অনেক দুর্নীতি আছে। বিষয়গুলো সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করা খুবই জরুরি। তারা প্রতিবছরই বলে আরও কিছু টাকা লাগবে, আধুনিকায়ন করলে আমাদের উৎপাদন বাড়বে। কিন্তু নতুনভাবে অর্থায়ন করলেও লোকসান কমে না।’ 

কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের লোকসান ২০০ শতাংশের ওপরে বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত এসব প্রতিষ্ঠানের লোকসানের অন্যতম কারণ দুর্নীতি। ভেতরের অনেক মানুষই এই দুরবস্থার পরিবর্তন চান না। তারা বলেন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। তাই খরচ ও লোকসান বাড়ছে। কিন্তু লোকসান বাড়িয়ে কর্মসংস্থান তৈরি কোনো উৎকৃষ্ট উদাহরণ নয়। কারণ যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা দিয়ে আরও দক্ষ ও অধিকসংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব। স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য কমিয়ে জনগণের টাকায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচানোর সময় এসেছে বলেও মনে করেন তিনি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা