প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩ ১৮:৪৩ পিএম
আপডেট : ০২ জুন ২০২৩ ১৯:৫৩ পিএম
রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনসহ অন্য অতিথিরা। প্রবা ফটো
আগামী অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পেশ করা হয়েছে সেগুলোর বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। সেই সঙ্গে অনুমিতির বেশিরভাগই ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী। এ কারণেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে বৈশ্বিক সমস্যাকে বড় করে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এখানে অভ্যন্তরীণ সমস্যাও অন্যতম। নানা কারণে বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এই কঠিন সময়ে বাজেটে কঠিন কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু তা নেওয়া হয়নি।
শুক্রবার (২ জুন) রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে পর্যালোচনায় এসব বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ’জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বার্ষিক উন্নয়ন ও বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রায় যে চমক দেখানো হয়েছে, তা উচ্চাভিলাষী, বাস্তবসম্মত নয়। আমদানি-নির্ভরতাকে মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে দেখা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বে দ্রব্যমূল্য কমে এসেছে। সেখানে দেশে পণ্যমূল্য এখনও অনেক চড়া। কারণ বাংলাদেশের কর কাঠামোতে সমস্যা রয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারের ব্যাংকঋণে নির্ভরতা এবং বাজার কারসাজিও এই মূল্যস্ফীতির বড় কারণ। মুদ্রানীতির সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থার সমন্বয় করা না হলে এসব সংকট থেকে উত্তরণ হবে না।’
সিপিডির পক্ষ থেকে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ করাকে ভালো উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে কর প্রদানের সনদ নিতে ২ হাজার টাকা কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা অবিবেচনাপ্রসূত বলে উল্লেখ করা হয়। এ ধরনের কর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বোঝা বলে উল্লেখ করে সিপিডি। তাই ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেয় সিপিডি। একাধিক গাড়ির মালিকানার ক্ষেত্রে পরিবেশ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাবের প্রশংসা করলেও সম্পদের সারচার্জের সীমা ৩ কোটি থেকে ৪ কোটিতে নেওয়াকে ভালোভাবে দেখছে না সিপিডি।
তিনি বলেন, ’এতে উচ্চবিত্তরাই সুবিধা পাবে।’
২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে এবং ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খুব একটা নজর নেই বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করা হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন দেশের অর্থনীতির জন্য ১৫টি চাপ তুলে ধরেন। কর আহরণ কমে যাওয়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, ব্যাংক খাতে তারল্য কমে যাওয়া, রেমিট্যান্স কমে যাওয়া, রিজার্ভ কমে যাওয়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ কমে যাওয়া এসব চাপের অন্যতম। এসব চাপের মুখে সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ’২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ‘কালো টাকা’ নিয়ে অর্থমন্ত্রী কোনো বক্তব্য দেননি। তাই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রকারন্তে রাখা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সিপিডির পর্যালোচনায় সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়লেও এর মধ্যে সরকারের পেনশন বরাদ্দ থাকায় শুভঙ্করের ফাঁকি থেকে যায়। তাই পেনশনের জন্য বরাদ্দ সামাজিক সুরক্ষা খাতে না রাখার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষা খাতে বরাদ্দ এখনও ২ শতাংশের নিচে থাকায় ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে তা ৩ শতাংশ নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সিপিডির গবেষকরা।
ব্যাংকিং কমিশন গঠন : সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বাজেট পর্যালোচনায় খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ’বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমান ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কারা নেয়, কীভাবে নেয়, কোথায় যাচ্ছে, কার কাছে যাচ্ছে এগুলো দেখা উচিত। কারণ এগুলো দিন শেষে করদাতাদের ওপর বোঝা বাড়াচ্ছে।’ খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ প্রয়োগ করে এর সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি।
সিপিডি গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ’সরকারি সহায়তা নিয়ে পুঁজিবাজারকে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নেওয়া যাবে না। পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে হলে স্মার্ট সংস্কার করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি আইএমএফ প্রস্তাবে পুঁজিবাজারের সংস্কার নিয়ে কোনো শর্ত দেয়নি।’ আর সামাজিক নিরাপত্তায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাতা ন্যূনতম আড়াই হাজার টাকা হওয়া উচিত বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, ’করফাঁকি ঠেকানো গেলে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ করা সম্ভব। তখন সামাজিক নিরাপত্তা খাতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ নিয়ে সমস্যা হবে না।’
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম খান বলেন, ’বাজেট প্রস্তাবনায় বিদেশ পেমেন্ট কতটা বকেয়া রয়েছে তা নিয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। হুন্ডি, অর্থ পাচার ও আয়বৈষম্য নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। তার মানে আগের বাজেটে যেসব দুর্বলতা ছিল তা প্রস্তাবিত বাজেটেও রয়ে গেছে।‘