প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩ ১৫:৫৬ পিএম
আপডেট : ০২ জুন ২০২৩ ১৬:১৪ পিএম
‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি, বিত্তবানদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায়ের চেষ্টাও করা হয়েছে। এইজন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে কর ও সারচার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাবনা যেসব ক্ষেত্রে বিত্তবানদের কাছ বাড়তি আদায়ে চেষ্টা করা হয়েছে।
পরিবেশ সারচার্জ: একাধিক গাড়ি ব্যবহারকারী বিত্তবানদের এখন থেকে গুনতে হবে বাড়তি টাকা। পরিবেশদূষণ কমানোর উদ্যোগ হিসেবে একাধিক গাড়ির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিসি বা কিলোওয়াট-ভিত্তিক পরিবেশ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। সিসি এবং কিলোওয়াটের ওপর ভিত্তি করে এ কর ২৫ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ১৫০০ সিসি বা ৭৫ কিলোওয়াট পর্যন্ত গাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকা, ২০০০ সিসি বা ১০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা , ২৫০০ সিসি বা ১২৫ কিলোওয়াট পর্যন্ত গাড়ির জন্য ৭৫ হাজার টাকা , ৩০০০ সিসি বা ১৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা , ৩৫০০ সিসি বা ১৭৫ কিলোওয়াট পর্যন্ত গাড়ির জন্য ২ লাখ টাকা, ৩৫০০ সিসি বা ১৭৫ কিলোওয়াটের উপরে হলে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পরিবেশ সারচার্জ দিতে হবে। যা গাড়ির নিবন্ধন বা ফিটনেস নবায়নের সময় উৎসে কর হিসেবে যা আদায় করা হবে। এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, ২০০১ সিসি থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানিতে এখন ২০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে ৩৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বেশি সিসি গাড়ির দাম আরও বাড়বে এবং বিত্তবানদের খরচ বাড়বে।
প্লট ও ফ্ল্যাটে কেনায় বাড়তি কর: ফ্ল্যাট-প্লট নিবন্ধন করার সময় ক্রেতাকে খরচ বাড়বে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও চট্টগ্রাম ডেভলপমেন্ট অথোরিটি (সিডিএ) এলাকার আওতাভুক্ত জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের গেইন ট্যাক্স চার শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আট শতাংশ করা হয়েছে। আর দেশের অন্যান্য এলাকায় এই হার তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে চার শতাংশ করা হয়েছে। তাই আগামী অর্থবছরে বাড়তে পারে জমি ও ফ্ল্যাটের দাম।
ভ্রমণে খরচ বাড়বে: ইউরোপ-আমেরিকা ভ্রমনে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ কমিয়ে আনা এবং রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভ্রমণ কর বর্তমানে ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা, যা আট বছর আগে শেষবারের মতো বাড়ানো হয়েছিল। বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬ হাজার পর্যন্ত। উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, হংকং, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাউজ, কম্বোডিয়া, তাইওয়ান জন্য আকাশ পথে ভ্রমন কর দিত হবে ৬ হাজার টাকা, আকাশ পথে সার্কভুক্ত দেশের ক্ষেত্রে ২ হাজার টাকা এবং সার্ক বহির্ভূত দেশে ৪ হাজার টাকা। স্থল ও জল পথে ভ্রমনের জন্য ১ হাজার টাকা, ভ্রমন কর প্রস্তব করা হয়েছে। এছাড়া দেশে আকাশ পথে ভ্রমন কর ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়াও বিদেশ থেকে স্বর্ণ আমদানি করলে দিতে হবে বাড়তি শুল্ক। কারণ, ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় বিদেশ থেকে আসার সময় ব্যাগে স্বর্ণ আনার পরিমাণ ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) থেকে কমিয়ে ১১৭ গ্রাম করা হচ্ছে। আবার ভরিপ্রতি শুল্কের পরিমাণ ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে বিত্তবানরা সাধারণত যেসব খাবার পছন্দ করেন, সেগুলোর ওপর দাম বাড়াতে নতুন করে শুল্ক আরোপ বা বাড়ানো হয়েছে। যেমন বাসমতি চাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আর কাজুবাদাম আমদানিতে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ থেকে শুল্ক বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হচ্ছে। আর আলিশান বাড়িতে ব্যবহৃত বিদেশি ফ্রিজ, ফ্যান ও লিফট কেনায় শুল্ক চলতি অর্থবছরের চেয়ে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদেশি লিফটের আমদানি শুল্ক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ এবং এস্কেলেটর আমদানি শুল্ক ১ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় গাড়ি, প্লট ও দামি ফ্লাটের ক্রেতা সাধারণত বিত্তমান মানুষজন। এসব পন্যে বাড়তি শুল্ক ও সারচার্জ আরোপ এসব পণ্যের দাম বাড়াবে। এমন এখন থেকে বাড়িত রাজস্ব আয় করতে পারবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর)।