× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আরও কমল বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩ ১৩:২৫ পিএম

আরও কমল বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি

২০২২-২৩ অর্থবছরের কোনো মাসেই বেসরকারি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ব্যাংক খাত। কারণ চলতি অর্থবছরের জন্য বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। কিন্তু এ খাতের প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ করা যাচ্ছে ধারাবাহিক পতন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন সংকটে দেশে উৎপাদন কমেছে। বিনিয়োগের জায়গা সংকুচিত হওয়ার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাতেও ভাটা পড়েছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে ঋণের চাহিদা আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে। নতুন করে বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়ীরা। তা ছাড়া ডলারের দাম বাড়ার কারণে বেশি ঋণের প্রয়োজন হচ্ছে। এতে নভেম্বরে কিছুটা বেড়েছিল বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে প্রবৃদ্ধিতে আবারও পতন দেখা দেয়, যা এখনও চলমান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতে ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের মাস মার্চে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ।

আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এসবের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশেও। বিশেষ করে ডলার সংকট বেশ ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। এ সংকট সমাধানে সরকার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে। এতে রিজার্ভের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এপ্রিল শেষে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদণ্ডে হিসাব করলে রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমে দাঁড়াবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর থেকে এমনিতেই ঋণের চাপ বেড়েছে। কারণ ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের মধ্যে। যদিও আগামী জুন থেকে সুদের হার বাড়বে। এজন্য অনেকেই নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াচ্ছেন। গত কয়েক মাসে ডলারের দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ফলে আমদানিকারকদের ঋণপত্রের মূল্য বেড়ে গেছে। এ কারণে ঋণের পরিমাণ বাড়ার কথা থাকলেও তা কমেছে। এতে বেসরকারি খাতে প্রভাব তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকে। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে। করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর ব্যাপকহারে কমে গিয়ে ২০২০ সালের মে মাসের শেষে প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। তবে পরের মাস জুন থেকে তা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের করা প্রাক্কলনের চেয়েও কম। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্জন ছিল অনেক কম।

এদিকে অর্থের প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণ নিয়েছে সরকার। অর্থবছরের শুরু থেকেই এ ধারাবাহিকতা লক্ষ করা যাচ্ছে। কারণ তারল্য সংকটের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারকে তেমন একটা ঋণ দিতে পারছে না। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৪ মে পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৮৫ হাজার ২৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আগের অর্থবছরে সরকার নিয়েছিল ৩১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।

ব্যাংকারদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাজারে টাকা ছাড়ার ফলে নোটের পরিমাণ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১ টাকা বাজারে ছাড়লে তা ৫ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। মার্চে ভোক্তা মূল্যসূচক ৭ মাসে সর্বোচ্চ বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হওয়ায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে আসে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। 

গত বছরের মে মাসে রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। তা ২৮ শতাংশ কমে গত মাসে ৩০ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ডলারের দর বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানি, বাজারে পণ্য সংকট, মূল্যস্ফীতি ও টাকার সরবরাহ সবই একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত।

প্রসঙ্গত, আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিতে চায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। ৬ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রাথমিক আকার ধরা হচ্ছে প্রায় ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি বাজেট দাঁড়াবে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। সরকার এই ঘাটতি অর্থায়নের জোগান দেবে তিন জায়গা থেকে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আসবে ১ লাখ কোটি টাকা, ব্যাংক খাত থেকে নেবে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা আর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে। অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি ঋণ নেবে সরকার।

এসব বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া মানে বাজারে টাকা ছাড়া, যা মুদ্রাস্ফীতি ও লেনদেন ভারসাম্যের (বিওপি) ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। অর্থায়ন কমে যায় বেসরকারি খাতে। ফলে কমে যেতে পারে নতুন কর্মসংস্থান।

তিনি বলেন, জনগণের হাতে অতিরিক্ত অর্থ থাকলে পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে, যা দাম বৃদ্ধি করবে। বিপুল পরিমাণ অর্থ বাজারে ছাড়লে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক এই কর্মকর্তা। অর্থের প্রচলন বেড়ে গেলে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বেড়ে যায়, যার ফলে আমদানিও বাড়ে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা