× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বড় ঘাটতি বাড়াবে মূল্যস্ফীতি

আসিফ শওকত কল্লোল

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩ ০৮:০৭ এএম

আপডেট : ০১ জুন ২০২৩ ১৪:১১ পিএম

বড় ঘাটতি বাড়াবে মূল্যস্ফীতি

নির্বাচনের বছরে জনতুষ্টির বাজেট করতে গিয়ে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল ঘাটতির চাপ নিতে যাচ্ছে সরকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই ঘাটতি বাজেটের কারণে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ ঘাটতি বাজেটের অর্ধেকের বেশি পূরণ করা হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ করে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, জিডিপির হিসাবে ৫ দশমিক ২ শতাংশের বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ (নিট) নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) সংশোধিত বাজেটে যা ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়বে ১৬ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা। এটি এক অর্থবছরের হিসাবে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে এপ্রিলেই নেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন। এবারের বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম করা হয়েছে- ‘উন্নয়নের দেড় দশক : স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ এই বক্তৃতায় মোট অধ্যায় রয়েছে ১১টি। বাজেট বক্তৃতাজুড়ে সরকারের নানা উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সরকারের আয় কম হবে বলেই ব্যাংক থেকে আগামী বাজেটে বেশি ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হলে নতুন টাকা ছাপিয়ে দিতে হয়। এর প্রভাব সরাসরি মূল্যস্ফীতির ওপর পড়ে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমাতেই হবে। অন্যথায় মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে গেলে মানুষের দুর্ভোগও বেড়ে যাবে। এর জন্য সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ে লাগাম টানতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সরকার আগামী অর্থবছরে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চায়। বর্তমানে ব্যাংকে আমানতের সুদহার ৭ দশমিক ৫। কিন্তু ব্যাংকে ডিপোজিট রেট কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে চাচ্ছে না। পাশাপাশি মোট আমানতের পরিমাণও অনেক কম। এ ছাড়া দেশে এখন মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ অবস্থায় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করলে সাধারণ মানুষ কোথা থেকে ঋণ পাবে? 

তিনি আরও বলেন, কয়েক মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ দিয়েছে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি বাড়বেই। বাজারে ক্রাউডিং আউট হবে। সাধারণ মানুষকে বেশি সুদে ঋণ নিতে হবে। ফলে ব্যবসায় খরচ বেড়ে যাবে। 

আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমাতে হবে। উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে টাকা তো নেবেই। তারা টাকা নিয়ে দেশের উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করলে মূল্যস্ফীতি এমনিতেই কমে আসবে। এ জন্য মূল্যস্ফীতি কমানোর অন্যান্য উদ্যোগের চেয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ কম নেওয়াই হবে ভালো উদ্যোগ।

অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সরকার যদি ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়, তাহলে আগামী অর্থবছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে প্রত্যাশিত ৩৩% প্রবৃদ্ধি পূরণ না হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। দেশীয় উৎস থেকে অর্থায়নের পরিবর্তে বিদেশি উৎস থেকে স্বল্প সুদে অর্থায়ন বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে অবশ্যই আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক কমানোসহ এসব পণ্য উৎপাদনে প্রণোদনা বাড়াতে হবে।

অর্থ বিভাগের একনজরে বাজেটের তথ্য থেকে জানা যায়, আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে একই লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ছয় দশমিক শূন্য তিন শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। অন্যদিকে, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য সরকারের মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আসবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব খাতবহির্ভূত (নন-এনবিআর) থেকে আয় হবে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ছাড়া প্রাপ্তি (এনটিআর) ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

এদিকে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে ব্যয়ের দুটি খাত রয়েছে। একটি হলো সরকারের আবর্তক ব্যয় বা পরিচালন ব্যয়। এর আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা মোট সরকারি ব্যয়ের ৬৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং জিডিপির ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অন্যটি হলো উন্নয়ন ব্যয়, যার পরিমাণ ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় থাকবে ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা (৬৪.২৬ শতাংশ) এবং বিদেশি প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আসবে ৯৪ হাজার কোটি টাকা (৩৫.৭৪ শতাংশ)। কিন্তু সামগ্রিক ঘাটতি অনুদান ছাড়া ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।

এদিকে বাজেটে বিদেশ থেকে একটি বিশাল অঙ্কের ঋণ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। আগামী বাজেটে বিদেশি নিট ঋণপ্রাপ্তি ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্য ছিল ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা; যা চলতি অর্থবছরে ছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। আর ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে অধিকাংশই নেওয়া হবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হিসেবে; যার পরিমাণ হচ্ছে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণপ্রাপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কড়াকড়ি আরোপ করায় সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে চলতি বছর ধস নেমেছে। সংশোধিত বাজেটে এ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। আর আগামী বাজেটে অন্যান্য নিট ঋণ ধরা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে আগামী বাজেটে ভর্তুকি খাতে সরকার ব্যয় করবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এর বড় অংশ ব্যয় হবে বিদ্যুতে, যার পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কৃষিতে যাবে ১৭ হাজার কোটি, রপ্তানি ভর্তুকিতে যাবে ৭ হাজার ৮২৫ কোটি এবং প্রণোদনায় ব্যয় হবে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাতের ভর্তুকিতে ব্যয় হবে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে আনা হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা