আনিছুর রহমান
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩ ১২:১৩ পিএম
আপডেট : ৩০ মে ২০২৩ ১২:৩৪ পিএম
ঈদুল ফিতরের আগের সপ্তাহ থেকেই ইতিবাচক প্রবণতা শুরু হয়েছিল দেশের পুঁজিবাজারে। সেই ধারাবাহিকতা একটু একটু করে বাড়ছে দুই পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। ফলে ফ্লোর প্রাইস থেকে ওপরে উঠছে বেশ কিছু শেয়ারের দর। কিন্তু এই প্রবণতায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বীমা খাতের শেয়ারদর। গত ১৪ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনের তথ্য অনুযায়ী, এ সময় সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে বীমা খাতের কোম্পানির শেয়ারের। সেই সঙ্গে স্বল্প মূলধনি কিছু কোম্পানির শেয়ারদরও বাড়ছে।
শেষ ১১ কার্যদিবসে দর বাড়ার শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টিই ছিল বীমা খাতের কোম্পানি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে অন্তত ৩৩ শতাংশ। আর শেষ ১১ কার্যদিবসে দর বাড়ার শীর্ষ ২০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টিই ছিল বীমা খাতের কোম্পানি। অর্থাৎ ওই সময়ে বীমা খাতের ১৫টি কোম্পানির শেয়ারদর কমপক্ষে ২৯ শতাংশ বেড়েছে। কেন বীমা খাতের শেয়ারের দর বাড়ছেÑ এমন প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বলছেন, বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন কম। তাই এসব শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা অনেকটাই সহজ।
অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজারে বীমাসহ স্বল্প মূলধনি কোম্পানির দিকে ঝুঁকেছে একটি চক্র। এই চক্রের দেখাদেখি অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারীও ঝুঁকছেন এসব শেয়ারে। ফলে অস্বাভাবিক হারে দর বাড়ছে। যদিও এসব কোম্পানি আর্থিকভাবে খুবই দুর্বল।’
বীমা কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি নিয়ে আরেক পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন বলেন, সব যানবাহনে বীমা বাধ্যতামূলক করা হবে। এমন খবরকে পুঁজি করে একটি চক্র এ খাতের শেয়ারের দর বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। এর পেছনে দৌড়াচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও। ফলে একটা সময় এসে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু চক্রটি ঠিকই লাভ নিয়ে চলে যাবে। আগের অস্বাভাবিক দরে এ খাতের শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এখান থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেননি বিনিয়োগকারীরা।
গত ১১ মে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের। লেনদেন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই বিক্রেতা শূণ্য অবস্থায় সর্বোচ্চ হারে দর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবশেষ ১১ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর ২১ টাকা ৮০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকা ৯০ পয়সায়। অর্থাৎ এ সময়ে শেয়ারটির দর বেড়েছে ১৮০ দশমিক ১৭ শতাংশ। এরপর সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্সের। গত ১৪ মে শেয়ারটির দাম ছিল ৩০ টাকা। মাত্র ১১ দিনে শেয়ারটির দর ২৪ টাকা ১০ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪ টাকা ১০ পয়সায়। অর্থাৎ এই সময়ে শেয়ারদর বেড়েছে ৮০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর পরের অবস্থানে আছে জীবন বীমা খাতের কোম্পানি রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড। উক্ত সময়ে এই কোম্পানির শেয়ারদর ৭০ টাকা ৫০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ উক্ত সময়ে শেয়ারটির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৭০ দশমিক ৫০ শতাংশ।
একইভাবে পর্যায়ক্রমে বেড়েছে সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা খাতের কোম্পানির শেয়ারদর। কিন্তু দর বৃদ্ধির শীর্ষ থাকা ১৫টি কোম্পানির মধ্যে ৬টি কোম্পানি উক্ত সময়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য দিয়েছে। যাতে দেখা যায়, শুধু মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্সে প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। বাকি পাঁচটিরই ইপিএস আগের বছরের চেয়ে কমেছে। দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা এসব বীমা কোম্পানির মধ্যে চারটিই জীবন বীমা খাতের। বাকিগুলো সাধারণ বীমা খাতের কোম্পানি।
বীমা দাবি মেটাতে না পারাসহ নানা অনিয়ম নিয়ে এ খাতের কোম্পানিগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। এর মধ্যে সম্পদ বেঁচে বীমা দাবি পূরণের নির্দেশও দিয়েছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। বীমা খাতের মধ্যে জীবন বীমা খাতের অনেক কোম্পানিই গত দু-তিন বছর কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। অনেকেই তাদের আর্থিক প্রতিবেদনও সময়মতো উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে।