পঞ্চগড় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩ ১৫:০১ পিএম
আপডেট : ২৯ মে ২০২৩ ১৫:০১ পিএম
লাল মরিচে রঙিন হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের ফসলের মাঠ। প্রবা ফটো
পঞ্চগড়ে মরিচ পাকতে শুরু করেছে। তাই লাল মরিচে রঙিন হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের ফসলের মাঠ। চাষিরাও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মরিচ তোলা আর শুকানোর কাজে। ফলন আর দাম ভালো পাওয়ায় মরিচ চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক। স্থানীয় শ্রমিকদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে শ্রমিকরাও মরিচ ক্ষেতে কাজ করছেন।
অনুকূল আবহাওয়ায় চলতি মৌসুমে পঞ্চগড়ে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় স্থানীয় জাতের মরিচের পাশাপাশি উচ্চফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের বাঁশগাইয়্যা, বিন্দু, পাবনা, জিরা, হটমাস্টার, কারেন্ট মরিচের চাষ করেছেন চাষিরা।
সরেজমিন দেখা যায়, চলতি মৌসুমে পঞ্চগড়ে মাঠের পর মাঠ মরিচের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে পাকতে শুরু করায় মরিচ তুলছেন চাষিরা। বাড়ির উঠানে, ক্ষেতের পাশে ও খোলা বড় বড় মাঠে প্লাস্টিক বিছিয়ে মাটিতে থরে থরে শুকানো হচ্ছে লাল মরিচ। লাল মরিচের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য চারদিক থেকে ভেসে আসছে এর ঝাঁজালো গন্ধ। মাঠ থেকে মরিচ তুলে দু-তিন দিনের মাথায় শুকিয়ে বাজারজাত করতে পারছেন কৃষকরা।
স্থানীয় বাজারগুলোতে মরিচের বেচাকেনা বেড়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা বাজারে আসছেন মরিচ কিনতে। চলতি মৌসুমে প্রতি মণ শুকনো মরিচ জাতভেদে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়। দ্রুত মরিচ শুকিয়ে তা বিক্রি করে নগদ টাকা পাচ্ছেন কৃষকরা।
এদিকে কয়েক বছর ধরে মরিচে অতিরিক্ত পোকামাকড়ের আক্রমণ, বৈরী আবহাওয়া, মরিচের দাম না থাকা, নানা সমস্যার কারণে লোকসানে পড়তে হয়েছে চাষিদের। চলতি মৌসুমে তীব্র দাবদাহে কৃষকদের সেচ বেশি দিতে হয়েছে বলে জানান তারা। পাশাপাশি বাজারে চলতি দাম বজায় রাখার অনুরোধ করেন চাষিরা।
সদর উপজেলার মরিচ চাষি মোনতাজ আলী বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। এতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ঘরে ২৫ মণ মরিচ তুলেছি। আরও চার-পাঁচ মণ মরিচ ঘরে তুলতে পারব। বাজারে যে হারে মরিচের দাম পাচ্ছি, তাতে আমি অনেক খুশি।’
জেলার আটোয়ারী উপজেলার মরিচ চাষি আছিরুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর ধরে এনথ্রাকনোজ, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতসহ নানা কারণে চাষাবাদ কমিয়ে দিয়ে এবার ৭০ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করেছি। তবে খরার কারণে সেচ একটু বেশি দিতে হয়েছে। কিন্তু এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। একই সঙ্গে পাকা মরিচের রঙও হয়েছে টুকটুকে লাল। মরিচের দাম বাজারে যেমনটি আছে, সেটি যেন পুরো মৌসুমজুড়ে চলে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছোট ছোট পাইকারদের কাছ থেকে শুকনা ও কাঁচা মরিচ কিনে কমিশনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠান তারা। এদিকে শুকনা মরিচ বাজারজাত ও বিভিন্ন বহুজাতিক কারখানায় সরবরাহ করার কাজে সরগরম হয়ে উঠেছে জেলার পাইকারি বাজারগুলো। মান ভালো থাকায় জেলার হাটবাজারগুলো থেকে কৃষকদের কাছ থেকে কেনা এসব মরিচ আড়তদারদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
আটোয়ারী উপজেলার মেসার্স রাব্বী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছরই আমরা খুচরা ও পাইকারি মরিচ কৃষকসহ ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে কিনি। আমরা এবার জাতভেদে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা দরে মরিচ কিনছি। আমরা ঢাকা, ফেনী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মরিচ পাঠিয়ে থাকি। তবে গত কয়েক বছর নানা কারণে মরিচের চাষ কম হওয়ায় বাজারে সংকট ছিল। এবার আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা মরিচের চাষ বেশি করেছেন। দামও ভালো পাচ্ছেন। তাদের পাশাপাশি আমরাও মরিচের ব্যবসা করে ভালোই মুনাফা পাচ্ছি।’
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৮ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। এ থেকে ২২ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। তবে চলতি মৌসুমে ৮০০ কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, এবার খরার কারণে মরিচের আয়ুষ্কাল দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। কৃষকরা অনেকবার করে মরিচ তুলতে পারছেন। তবে সেচ একটু বেশি দিতে হয়েছে। আমরা কৃষকদের মাঠপর্যায়ে থেকে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এ জেলার মরিচ এখানকার অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধিত করবে।