× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ

অনিয়ম-গচ্চার প্রকল্পে মেয়াদ বাড়ল ৬ মাস

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩ ১০:৩২ এএম

আপডেট : ২৯ মে ২০২৩ ১৫:৩০ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণে নজিরবিহীন ধীরগতি, অনিয়ম ও বিপুল টাকার গচ্চার প্রকল্পটির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। যেখানে তিন বছরে কাজ শেষ হওয়ার কথা, সেখানে ১১ বছর কেটে গেলেও এ হাসপাতালটির দুয়ার খোলেনি। এ নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও একবার একনেক সভায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তবে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে দিনের পর দিন এ প্রকল্প জিইয়ে রেখে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করে চলেছেন।

কুষ্টিয়া ও এর আশপাশের পাঁচ জেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ২০১২ সালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি নেয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। তবে তা আজও শেষ হয়নি। সর্বশেষ সংশোধনীতে আর সময় না বাড়ানোর শর্ত দেওয়া হয়। তবে তাতেও ব্যর্থ হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আর এই ব্যর্থতা সত্ত্বেও সম্প্রতি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় জরুরি কাজগুলো সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করে অক্টোবরে উদ্বোধনের শর্তে মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। 

শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা ছিল ২৭৫ কোটি টাকা। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮২ কোটি টাকা। শুধু দেরি হওয়ার কারণেই এ প্রকল্পে গচ্চা যাচ্ছে রাষ্ট্রের ৪০৭ কোটি টাকা।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পটি ২০১২ সালে ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিসেম্বর ২০১৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। তবে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা কারণে প্রকল্পটির দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বেড়েছে।

২০২০ সালে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ৫ জানুয়ারি উপস্থাপন করা হয় একনেকে। বাস্তবায়নের ধীরগতি দেখে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রস্তাব অনুমোদন না দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। সে নির্দেশ মেনেই তদন্ত কমিটির প্রধান আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী গত ১৭ জানুয়ারি প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

পরবর্তীতে আইএমইডির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান অভিযুক্তকে ওএসডি করা হয়। দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। অভিযুক্ত অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

এরপর ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর ৬৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি জানুয়ারি ২০১২ থেকে জুন ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদিত হয়, যেখানে শর্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ফের সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।

পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক চৌধুরী সরোয়ার জাহান জানান, গত বছরের জুন ২০২২ পর্যন্ত প্রকল্পের অনুকূলে ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ২৮৫ কোটি টাকা, অর্থাৎ অগ্রগতি মোট ব্যয়ের ৪২ শতাংশ। তবে ভৌত কাজের অগ্রগতি ৬৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আরএডিপিতে এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৩৭৪ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। তিনি জানান, প্রকল্পটি চলতি বছর জুনে শেষ হওয়ার কথা। 

কেন নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না- জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতার কথা বলেন। 

প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদনের পরও কেন সঠিক সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না, তা নিয়ে দুটি কারণে কথা বলেছেন কুষ্টিয়ার গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম। প্রথমত, প্রকল্পভুক্ত হাসপাতাল ভবন নির্মাণের একটি ভেরিয়েশন প্রস্তাব ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের প্রশাসনিক আদেশ গত বছরের ১৩ অক্টোবর জারি করা হয়।

অথচ এ অনুমোদন ছাড়া কোনো কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এখন হাতে যে সময় আছে, তার মধ্যে হাসপাতাল ভবনের সব কাজ শেষ করে ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, প্রকল্পের জন্য নতুন অধিগৃহীত আট একর জমি আজ পর্যন্ত হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে সেখানে প্রস্তাবিত স্থাপনার নির্মাণকাজও নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না। 

চৌধুরী সরোয়ার জাহান সভায় বলছেন, এ প্রকল্প শেষ করতে আরও এক বছর লেগে যাবে। তিনি আরও বলেছেন- হাসপাতালের লিফট, এয়ারকুলার, মেডিকেল ওয়েট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, সাব-স্টেশনের যন্ত্রপাতি, মেডিকেল গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি ও মালামাল, অগ্নিনির্বাপণসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম আমদানি করতে হবে। তবে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এগুলো আমদানি করে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।

এ ছাড়া সভায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রকৌশলী (স্বাস্থ্য) খাইরুল ইসলাম জানান, আমদানি করা লিফট ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে। লিফটের কমিশনিং এবং প্রকল্প সাইটে যেতে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে। সেগুলো স্থাপন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্ব চালু করতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। 

প্রকল্প পরিচালক সভাকে জানান, গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হস্তান্তরের পর প্রতিষ্ঠানটির যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে। যন্ত্রপাতি স্থাপন করে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক বিল পরিশোধ করতে হবে, যা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এজন্য প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

সভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ধীরগতির জন্য তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তিনি প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পন্ন করতে কী পরিমাণ বাজেট প্রয়োজন জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক জানান, হাসপাতাল ভবনের যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং আনুষঙ্গিক কাজের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। আর গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানান, লিফট স্থাপনের জন্য তিন মাস এবং অন্যান্য অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা এবং ছয় মাস সময় প্রয়োজন হবে। 

সভাপতি সভায় নির্দেশনা দেন- চলতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের সব অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে হবে এবং অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আবশ্যিকভাবে হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে লিফট স্থাপন, যন্ত্রপাতি স্থাপন, অসমাপ্ত কাজ অবশ্যই শেষ করতে হবে এবং নতুন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না। এ সময় তিনি পরিকল্পনা সচিব সত্যজিতের সঙ্গে কথা বলে ছয় মাস সময় বৃদ্ধির কাগজ দ্রুত জমা দিতে বলেন। 

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পরিকল্পনা (অনুবিভাগ) জাহাঙ্গীর হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, হাসপাতালে লিফট লাগানোসহ বেশকিছু কাজ বাকি আছে, যা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো জুনের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই ছয় মাস মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে একই তথ্য দিয়েছেন।

নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প শেষ করার বিষয়ে চৌধুরী সরোয়ার জাহান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গণপূর্ত কাজ শেষ করতে পারলে আমরা অক্টোবরের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল উদ্বোধন করতে পারব। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা