প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৩ ১৩:৫০ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
সম্ভাব্য আর্থিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ। এরই মধ্যে ইউরোপের দেশ জার্মানি পড়েছে মন্দার কবলে। ইউক্রেন আক্রমণের কারণে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়ও জার্মানির অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।
লাগাতার মূল্যস্ফীতি জার্মানির অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হওয়ায় ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশটিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। জার্মানির পরিসংখ্যান অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশটির অর্থনীতি ০ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। তার আগের তিন মাস অর্থাৎ গত বছরের শেষ প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ০ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। কোনো দেশের অর্থনীতি যদি পরপর দুই প্রান্তিকে সংকুচিত হয়, তাহলে দেশটি অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।
জার্মানির আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডেকাব্যাংকের অ্যানালিস্ট আন্দ্রেয়াস শয়ালা বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপে জার্মানি ভোক্তাদের ওপর বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি পুরো অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়েছে।’
বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে চলতি বছরের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ; যা গড়ে ইউরো অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ, কিন্তু যুক্তরাজ্যের চেয়ে কম। একই মাসে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
জার্মানিতে অত্যধিক দামের কারণে খাবার, পোশাক ও আসবাবপত্রের মতো খাতে পারিবারিক ব্যয় কমেছে। অন্যদিকে, জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে ব্যবসা ও শিল্পোৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
দেশটির ফেডারেল স্ট্যাটিসটিক্স এজেন্সি ডিস্ট্যাটিসের এক বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দিনের পর দিন উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকায়, বছরের শুরুতেই তা জার্মানির অর্থনীতির ওপর বোঝা হয়ে চেপে বসেছিল। এখন তা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।
তবে এর আগে সংস্থাটি জানিয়েছিল, জার্মানি মন্দা এড়িয়ে যেতে পারবে। কিন্তু সংশোধিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় সর্বশেষ ত্রৈমাসিকে পারিবারিক ব্যয় ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে গেছে।
জার্মানি সরকারের ব্যয়ও কমেছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির জন্য সরকারি অনুদান ফিরিয়ে আনার পর গাড়ি বিক্রিও কমে গেছে। যদিও রাশিয়ার জ্বালানির ওপর জার্মানির অতিনির্ভরশীলতার কারণে কেউ কেউ আরও ভয়াবহ মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পূর্বানুমানের তুলনায় মন্দার তীব্রতা কম হওয়ার পেছনে শীতের তীব্রতা ও কোভিডসংক্রান্ত বিধিনিষেধ কাটিয়ে চীনের অর্থনীতি পুনরায় সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে, জার্মানিতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে; সেই সঙ্গে বেড়েছে রপ্তানিও। তবে এরপরও মন্দায় পড়ার হাত থেকে দেশটি বাঁচতে পারেনি। এ বিষয়ে এলবিবিডব্লিউ ব্যাংকের বিশ্লেষক ইয়েন্স-অলিভার নিকলাশ বলেন, ‘প্রাথমিক সূচকগুলো এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও সবকিছু দুর্বল হয়ে পড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।’
যাইহোক, জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বুন্দেসব্যাংক ধারণা করেছিল এপ্রিল থেকে জুন অর্থাৎ বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি সামান্য বৃদ্ধি পাবে। একই সময়ে ভোক্তা ব্যয়ও কমে আসবে।
তবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, এ বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে জার্মানির অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির দিকে যাবে।
তবে আইএমএফ তাদের পূর্বানুমানে বলেছে, বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে জার্মানির অর্থনীতি সবচেয়ে দুর্বল থাকবে এবং এ বছর তা ০ দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হবে। এ ছাড়াও উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে থাকা যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ০ দশমিক ৪ শতাংশ। সূত্র : বিবিসি