আনিছুর রহমান
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩ ১২:৪৬ পিএম
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান। প্রবা ফটো
মো. ছায়েদুর রহমান। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট। পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও আসন্ন বাজেট নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিছুর রহমান।
বাজেটের ঠিক আগ মুহূর্তে কেমন দেখছেন পুঁজিবাজার?
ছায়েদুর রহমান : বাজেট এলেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়। ফলে ঘোষিত বাজেট নীতি-সহায়তার ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীর সম্পৃক্ততা কমে ও বাড়ে। আমরা এমন বাজেট চাই, যাতে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও সম্পৃক্ততা বাড়বে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন বাজেট প্রস্তাব দিয়ে থাকে। কখনও বিবেচনা করা হয় আবার কখনও হয় না। পুঁজিবাজার ও অর্থবাজারের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কোনো দেশেরই অর্থনীতি শক্তিশালী হবে না।
আগের বছরগুলোর সঙ্গে এ বছরের পুঁজিবাজারের কোনো পার্থক্য দেখছেন?
ছায়েদুর রহমান : না। গতানুগতিক যেমন থাকে, এ বছরও তেমনই দেখছি। আসন্ন জাতীয় বাজেট নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রত্যাশার পাশাপাশি শঙ্কাও কাজ করছে। তাই খানিকটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই দোলাচল বাজেটপূর্ব সব সময় দেখা যায়।
ফ্লোর প্রাইস ও আসন্ন নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো পরিবর্তন দেখছেন?
ছায়েদুর রহমান : পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইসের প্রভাব দৃশ্যমান। তালিকাভুক্ত কোম্পানির একটি বড় অংশের শেয়ার লেনদেন হয় না বললেই চলে। তবে ধীরে ধীরে ফ্লোর প্রাইস থেকে উঠে আসতে শুরু করেছে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর। এটি চলমান থাকলে ফ্লোর প্রাইসের আর প্রয়োজন হবে না। একই সঙ্গে বিষয়টি আর সমস্যার কারণ হবে না।
সেকন্ডোরি মার্কেটে বিনিয়োগে কর অব্যাহতি তুলে দিতে চাইছে এনবিআর। এটিকে কীভাবে দেখছেন?
ছায়েদুর রহমান : এটি পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গণমাধ্যম সূত্রে এ সংক্রান্ত খবর জানার পরই সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগে কর অব্যাহতির গুরুত্ব তুলে ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়েছে বিএমবিএ। প্রতি বছর জুন মাসে কিছু মানুষ কর অব্যাহতি পাওয়ার জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। এটি তুলে দেওয়া হলে এ বিনিয়োগ আর হবে না। তখন শুধু প্রাইমারি বাজারে কর অব্যাহতির সুযোগ কোনো কাজে আসবে না। কারণ বাংলাদেশের প্রাইমারি বাজারের আকার খুবই ছোট। এত কম সংখ্যায় আইপিও আসে, যার জন্য কর প্রদানকারীরা বাজারে আসবেন না।
তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের পার্থক্য কি যথেষ্ট?
ছায়েদুর রহমান : সামগ্রিকভাবে করপোরেট করহার কী হবে সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। আমাদের দাবি, তালিকাভুকক্ত ও অতালিকাভাক্তু কোম্পানির করহারের পার্থক্য যেন বাড়ানো হয়। করহারের পার্থক্য যখন ১০ শতাংশ ছিল, তখনই উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করা যায়নি। এখন এটি সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে, কীভাবে উদ্যোক্তারা আসবেন? তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে অনেক বাধ্যবাধ্যকতার মধ্যে থাকতে হয়। এজন্য অনেক খরচও করতে হয়। কিন্তু অপরদিকে ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। বাড়তি চাপ এড়ানোর ভয়েই অনেকে পুঁজিবাজারে আসতে চান না।
গত বছর কর ছাড়েও শর্ত দেওয়া হয়েছিল। এটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ছায়েদুর রহমান : এত শর্তের বেড়াজালে ফেললে পুঁজিবাজারের লাভ হবে না। যেসব সুবিধা দেবে তা হতে হবে শর্তমুক্ত। চলতি অর্থবছরে শর্তসাপেক্ষে কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু কাজে আসেনি। কারণ শর্তসাপেক্ষে মানুষ টাকা নিয়ে আসতে চায় না। পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক ‘বিশেষ প্যাকেজ’ সুবিধা ঘোষণা করতে হবে সরকারকে। তবেই সবার সম্পৃক্ততা বাড়বে।
বিশেষ প্যাকেজে কী থাকা উচিত?
ছায়েদুর রহমান : করহারের পার্থক্য বাড়ানো দরকার, ভ্যাটের ক্ষেত্রেও একটি পার্থক্য থাকা উচিত। লভ্যাংশ প্রদানেও দুই-তিন স্তরে কর প্রত্যাহার করা দরকার। কারণ আয় এক জায়গা থেকে হলেও কর দিতে হয় বিভিন্ন খাতে। ধাপে ধাপে কর দেওয়ায় বিনিয়োগকারীরা লাভবান হন না। তাই তাদের আকর্ষণ কমে যায়।
এসব সুবিধায় বাজারে ভালো কোম্পানি আসবে?
ছায়েদুর রহমান : যখন কোনো উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারী দেখবেন পুঁজিবাজারে এলে তাদের লাভ হয়, তখন অবশ্যই আসবেন। কারণ প্রত্যেকেই তার সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন। লোভনীয় বা দৃশ্যমান কোনো সুযোগ-সুবিধা না দিলে কেউ-ই পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবেন না। কারণ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া পুঁজিবাজারে আসার বাধ্যবধকতা কারোর নেই।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য বাধ্যবাধ্যকতা থাকা উচিত?
ছায়েদুর রহমান : না। কাউকে বাধ্য করে তালিকাভুক্ত করার চেয়ে সুবিধা দিয়ে তালিকাভুক্ত করা অনেক ভালো। গবেষণা বলছে, তালিকাভুক্তির আগে প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ কর-ভ্যাট দিত, তালিকাভুক্তির পর তার চেয়ে বেশি দেয়। দৃশ্যমান কোনো লাভ দেখিয়ে ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে হবে। এতে সরকারেরও কর আহরণে সুবিধা হবে।
মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডের জন্য কোন সুবিধা দরকার?
ছায়েদুর রহমান : বন্ডে বিনিয়োগে যে পরিমাণ সুদ পাওয়া যায়, তা ব্যাংকের সুদহারের কাছাকাছি। তাই বন্ডে প্রাপ্ত সুদ বিনিয়োগকারীদের বাড়তি কিছু দেয় না। বন্ডে আকৃষ্ট করতে হলে সুদের ওপর কর অব্যাহতি দিতে হবে। কারণ এখনও বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে আমানত রাখাকেই বেশি নিরাপদ মনে করেন। আর মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশের ওপর থেকেও কর ছাড় দেওয়া উচিত। তাহলে মানুষ এখাতে বিনিয়োগ করবেন।