মেহেরপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩ ১১:৪১ এএম
মেহেরপুরের একটি বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে সুস্বাদু লিচু। প্রবা ফটো
সুস্বাদু লিচুর জেলা হিসেবে পরিচিত মেহেরপুরে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। মাটি ও আবহাওয়া লিচুর জন্য উপযোগী হওয়ায় মেহেরপুরে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য বাগান। এ ছাড়াও জেলার মধ্যে থাকা গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই লিচুর গাছ রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই আঁটি লিচু বা আগাম জাতের লিচু।
এসব লিচু মৌসুমের প্রথম দিকেই বাজারজাত করা যায় বলে দামও তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। তাই দিন দিন বাড়ছে লিচুর চাষ। এ বছর মেহেরপুরে ৩০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদনের আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগ।
লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, মেহেরপুর জেলায় আমের পাশাপাশি লিচুরও কদর দেশব্যাপী। আঁটি, বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচুর আবাদ হয়ে থাকে এই জেলায়। চলতি বছরে লিচুর মুকুল আসার পর থেকে আবহাওয়া ভালো থাকায় গাছে গাছে পর্যাপ্ত লিচুতে ভরে গেছে। তবে বৈরী আবহাওয়া, খরতাপ, অনাবৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে আঁটি লিচু ঝরে গেলেও বাম্পার ফলনের কারণে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন চাষিরা। তবে বোম্বাই ও আতা বোম্বাই লিচু টিকিয়ে রাখতে এখন শেষ মুহূর্তেও পরিচর্চায় ব্যস্ত রয়েছে চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি ইবাদত হোসেন জানান, এ বছর জেলার প্রতিটি বাগানে প্রচুর পরিমাণে লিচুর ফলন হয়েছে। তবে প্রথম দিকে প্রচণ্ড পরিমাণে দাবদাহ, অতিরিক্ত খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হলেও বাম্পার ফলনে সেটা পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু লিচু পড়ে গেলেও এ বছর বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় সেই ক্ষতি বুঝতে পারেনি চাষিরা।
একই গ্রামের লিচু চাষি মতিয়ার রহমান জানান, ৮০টি লিচু গাছ নিয়ে একটি বাগান রয়েছে আমার। যার বেশিরভাগই বোম্বাই ও আতা বোম্বাই লিচু। এ বছর প্রচুর পরিমাণে লিচু এসেছে। তিনি এ বছর তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রির টার্গেট করেছেন। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার টাকার মতো আঁটি লিচু বিক্রি করেছেন। বাকি গাছ থেকে তিনটির টার্গেট ছাড়িয়ে যাবেন বলে ধারণা করছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের লিচু চাষি নজরুল ইসলাম জানান, খরার কারণে প্রতিটি চাষিই ভয়ের মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রচুর পরিমাণে লিচু আসায় চাষিদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তিনি বলেন, এ বছর প্রতিটি চাষি লিচু থেকে ব্যাপক লাভবান হবেন।
কুষ্টিয়ার লিচু ব্যবসায়ী আজমল হোসেন জানান, মেহেরপুরের লিচু সুস্বাদু হওয়ায় সারা দেশেই কদর রয়েছে। আমরা প্রতি বছরই মেহেরপুরের হাট থেকে লিচু সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। তিনি বলেন, এবার খরার কারণে লিচুর আকার কিছুটা ছোট হলেও সুস্বাদু হওয়ায় অনেক দামে কিনতে হচ্ছে।
বরিশালের লিচু ব্যবসায়ী লিখন মিয়া জানান, তিনি দীর্ঘদিন থেকেই মেহেরপুরের লিচু সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি প্রতিদিন এক ট্রাক করে লিচু সংগ্রহ করে তা ঢাকা ও বরিশালে পাঠান। মেহেরপুরের লিচুর সারা দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে তিনি জানান।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, এ বছর ৬৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে; যা থেকে তিন হাজার টন লিচু উৎপাদন হবে। এর আনুমানিক বাজারমূল্য ৩০ কোটি টাকা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর কুমার মজুমদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, মেহেরপুরের লিচু বেশ সুস্বাদু। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এখানে প্রচুর পরিমাণ লিচুবাগান তৈরি হচ্ছে। লিচু চাষ বাড়াতে জেলা কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। সেই সঙ্গে চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ বছর মেহেরপুর জেলায় ৬৯০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার টন লিচুর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে; যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৩০ কোটি টাকা।