প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৩ ১৪:৪৯ পিএম
প্রবা ফটো
ডলারের দাম, রিজার্ভ সংকট এবং বেসরকারি ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। এ সংকট মোকাবিলায় সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালকদের এ-সংক্রান্ত একটি সভার আয়োজন করা হয়। এতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং বৃদ্ধির সমন্বয় করে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ ছাড়াও চারজন ডেপুটি গভর্নর এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গভর্নরের সঙ্গে নির্বাহী পরিচালকদের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না। কারণ গত বছরের তুলনায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক, সব সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কোভিড থেকে শুরু করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ওমিক্রন এবং বৈশ্বিক সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে যত ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, তার সবগুলোই খুব ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ। কোনোটাই তীব্র প্রভাব ফেলতে পারেনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।
বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাহী পরিচালক জানান, পূর্বেও রাজস্বনীতি এবং মুদ্রানীতি সমন্বয় করে আমরা জাতীয় অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। এবারও সেরকম পরিকল্পনা-ই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করার জন্য বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবারকার মুদ্রানীতিতে। ফলে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে আশাবাদী কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ডলারের দাম নির্ধারণ করা হবে বাজারের ওপর ভিত্তি করে। এতে ভারসাম্য নিশ্চিত হবে ডলার এবং টাকার মধ্যে। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সতর্ক বা ভারসাম্যমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণার চিন্তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যাতে যেকোনো ধরনের সংকট শক্তিমত্তার সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয় করার জন্য সতর্ক কৌশল গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রতি বছরের ১৫ জানুয়ারি মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরে দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ করা হয়, আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে বাজেটের বিশাল ঘাটতির অর্থায়নে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ না কমিয়ে বাড়ানো হয়। দ্বিতীয়ার্ধে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে এবং পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নীতি হার হিসাবে বিবেচিত রেপো সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ থেকে ৬ শতাংশ করা হয় সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে। অর্থাৎ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো জরুরি প্রয়োজনে অর্থ নিলে গুনতে হবে অতিরিক্ত সুদ।
পাশাপাশি রিভার্স রেপোও ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখলে ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে বেশি সুদ পাবে। এ ছাড়া মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে নামানো হয়।