প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩ ২০:৩৮ পিএম
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল। ছবি : সংগৃহীত
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরই দেশটির জ্বালানি তেলবাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমাদের এমন নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে তেলবাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে মস্কো। তাই এবার রাশিয়ার তেলবাণিজ্যের বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে উন্নত সাতটি দেশের সংগঠন জি-৭।
তবে সংগঠনটির এমন সিদ্ধান্তের ফলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল।
এদিকে রাশিয়ার সমুদ্রবাহিত অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার নির্ধারণ করতে সম্মত হয়েছে জি-৭, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অস্ট্রেলিয়া। এ ছাড়াও ইউক্রেনে আক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মস্কোকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টাও করছে দেশগুলো। সে কারণে রাশিয়া ঠিক কী পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানি করতে পারবে, সেটাও নির্ধারণ করে দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে রাশিয়া এসব নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলোতে আরও বেশি ফাঁকি দিতে পারেÑ যা নিয়ে গত শনিবার বৈঠক করেছেন জি-৭ নেতারা।
জি-৭ এর সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহে প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে ফাতিহ বিরল বলেন, ‘জ্বালানি তেল নিয়ে আমাদের যে বিশ্লেষণ রয়েছে তাতে দেখা যায় জি-৭ এর সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল সরবরাহ প্রক্রিয়ায় আপাতত কোনো পরিবর্তন আসবে না।’
জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের ফল সম্পর্কে আইইএর এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘রাশিয়ার জ্বালানি তেল সরবরাহ অব্যাহত থাকায় বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। তবে মূল্যমান নির্ধারণ করে দেওয়ার ফলে একই সময়ে মস্কো তার প্রচুর রাজস্ব হারিয়েছে।’
রাশিয়া তার জ্বালানি তেলকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে জানিয়ে ফাতিহ বিরল আরও বলেন, ‘রাশিয়া তাদের জ্বালানি শক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে, তবে তা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ এতে কিছু ত্রুটি, কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’
এদিকে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো। এটি দেশগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে একটি অস্থায়ী সমাধান দিতে পারে। এ ছাড়াও এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর গ্যাসের নির্ভরশীলতা থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে জোটভুক্ত দেশগুলো। তবে জি-৭ এর এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জলবায়ু কর্মীরা।
তারা সতর্ক করে বলেছেন, জোটের এ সিদ্ধান্তের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা ব্যর্থ হতে পারে। এ ছাড়াও বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ২ দশমিক ৭ ফারেনহাইটে সীমাবদ্ধ রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তাও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
তবে জলবায়ু কর্মীদের উদ্বেগ কমাতে ফাতিহ বিরল বলেন, ‘এর কিছু প্রভাব থাকতে পারে। তবে দেশগুলোর পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছে যে, যদি নির্ধারিত অঞ্চলে এর কিছু প্রভাব পড়তে শুরু করে তাহলে এটি দ্রুত সময়ের মধ্যে এমন অঞ্চলে স্থানান্তর করা হবে যেন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নষ্ট না হয়। এ ছাড়াও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির দিকে আমাদের স্থানান্তর ঘটছে এবং এটি অনেকের ধারণার চেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যেই হচ্ছে।’
তবে জি-৭ এর গ্যাস খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে ভিন্ন সুরে কথা বলেছে জার্মানি। সূত্র বলছে, রাশিয়া থেকে দীর্ঘদিন গ্যাস কেনা দেশটি জানায়, গ্যাস খাতে যে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে সেখানে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা নেই। সুতরাং কবে নাগাদ এটি চালু হবে তা স্পষ্ট নয়।
এ বিষয়ে বিরল জানান, ‘মূল সমস্যাটি হচ্ছে প্রায় কয়েক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইউরোপের দেশগুলো গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এখন এক দিনে সবকিছু পরিবর্তন করা সহজ নয়।’ সূত্র : রয়টার্স