গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৩ ১৬:১৮ পিএম
আপডেট : ১৯ মে ২০২৩ ১৭:১০ পিএম
রাজবাড়ীতে নতুন জাতের ধান বিনা-২৫ চাষ। প্রবা ফটো
রাজবাড়ীর পাংশায় পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বোরো জাতের বিনা ধান-২৫ আবাদ করে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে। পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র দুজন কৃষক দুই কেজি ধানের বীজ নিয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ২ বিঘা জমিতে এ ধানের চারা রোপণ করে সফলতা পেয়েছেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, দেশের চাহিদা অনুসারে সরু ও চিকন (প্রিমিয়াম কোয়ালিটি) চাল অপ্রতুল থাকায় এবং বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিনার উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ বিনা ধান-২৫ উদ্ভাবন করে। ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর বিনা ধান-২৫ জাতের উন্মোচন করা হয়। উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.সাকিনা খানমের ৮ বছরের গবেষণায় আসে সাফল্য।
বিনা ধান-২৫ মূলত ব্রি ধান-২৯ এর বীজে জাপানের একটি ল্যাপে ৪০ গ্রে মাত্রার কার্বন আয়রন রশ্মি প্রয়োগ করে উদ্ভাবন করা হয়। এই ধান স্বল্পমেয়াদি, জীবনকাল খুবই কম। গড়ে ১৩৮ থেকে ১৪৮ দিনে এই ধান ঘরে তোলা যায়। এ ধানের গড় ফলন হেক্টরপ্রতি সাড়ে সাত থেকে সাড়ে আট টন। এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত ধান জাতের মধ্যে বিনা ধান ২৫ সর্বাধিক লম্বা ও সরু।
উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের মেঘনা খামার পাড়া গ্রামের কৃষক মো. নজরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ধান কেটে মাড়াই করছেন। এসময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাকে ১ কেজি ধানের বীজ দেওয়া হয়। আমি সেই ধানের বীজ ১ বিঘা জমিতে চাষ করি। ধান কেটে আমি যেটা বুঝতে পারলাম প্রতি শতাংশে ১ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে যা অন্য সব ধানের তুলনায় অনেক বেশি ফলন হয়েছে।’
পার্শ্ববর্তী যশাই ইউনিয়নের কৃষক করিম মোল্লা বলেন, ‘আমি শুনেছি নজরুল ভাই নতুন ধানের চাষ করছে। শুরু থেকেই খোঁজখবর নিয়েছি। এখন ধানের ফলন দেখতে আসলাম। দেখে বুঝলাম অন্য সব ধানের চাইতে অনেক ভালো ফলন হয়েছে। আমি আগামীতে এই ধান চাষ করব।’
একই গ্রামের জামাল উদ্দিন বলেন, বিনা ২৫ ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ পেলে এই নতুন জাতের ধান চাষ করব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার ঘোষ বলেন, ‘বিনা-২৫ ধান বোরোর উন্নত একটি নতুন জাত। এর চালের আকার চিকন ও লম্বা। আমরা বিদেশ থেকে যে বাসমতী চাল আমদানি করি, এটা সেই চালের মতো। এ জন্য এই চালের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি। এর বাজারমূল্যও ভালো। উৎপাদন ব্যয় ও জীবনকাল অন্য ধানের তুলনায় কম।কিন্তু ফলন অন্য ধানের চেয়ে ভালো হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হবেন।’
তিনি আরও বলেন, এবার পরীক্ষামূলক জাতটির আবাদ করে সাফল্য পাওয়ায় এর বীজ সংরক্ষণ করে আগামী মৌসুমে এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে মাঠপর্যায়ে এ ধানের আবাদ করা হবে।