প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৩ ১৩:২৪ পিএম
প্রবা ফটো
বাংলাদেশে ৫০ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে। এ সাফল্য পণ্যের বৈচিত্র্যায়নের কোনো গ্যারান্টি নয়। একমাত্র পোশাক খাত ছাড়া রপ্তানিতে তেমন একটা বৈচিত্র্যায়ান হয়নি। বিশ্বের যে কয়টি জায়গায় সুযোগের বৈষম্য সবচেয়ে বেশি, দক্ষিণ এশিয়া তার মধ্যে অন্যতম। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকায় বাংলাদেশের উৎপাদনশীল অর্থনীতি সামনে এগোচ্ছে না। এটি সামষ্টিক অর্থনীতির একটি বড় সমস্যা।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট স্টোরি : রোল অব ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরস ইন ড্রাইভিং ডাইভারসিফিকেশন অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যান্স টিমার।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মূল সমস্যা হলো অনানুষ্ঠানিক খাত নিয়ে। অনানুষ্ঠানিক খাতে রয়েছে ৯৮ শতাংশ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান। দেশের উৎপাদন খাতের ১ দশমিক ৫ শতাংশ তাদের এড়িয়ে যায়, ১ শতাংশ তাদের সরাসরি বর্জন করে। ৯৭ শতাংশ ফ্যাক্টরি এদেরকে বহিরাগত হিসেবে মূল্যায়ন করে।’
তিনি তার প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, নতুন এ ডিজিটাল সময়ে এসে অনানুষ্ঠানিক খাতের এসব ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ফোকাসে আসছে। বিশেষ করে ই-কমার্সের মাধ্যমে তারা তাদের পণ্য বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে। এসব অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সে যুক্ত হওয়ার পর থেকে তাদের বিক্রি ও ব্যবসা বেড়েছে।
তার মতে, এসব প্রতিষ্ঠান আইনি জটিলতা ও করের ভয়ে ছোটই থাকতে চাচ্ছে। এটা হয়তো তাদের সীমিত ব্যবসায়িক দক্ষতার কারণে হয়ে থাকে। এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা দ্বৈত অর্থনীতির মধ্যে পড়েছে।
বাংলাদেশে সুযোগের বৈষম্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে অসমতা ও সুযোগের বৈষম্যকে আলোচনায় রাখছি। লিঙ্গ বৈষম্য থেকে শুরু করে ধর্ম ও জন্মস্থানের বৈষম্যও এখানে প্রবল। গত তিন যুগ ধরে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছে।’
টিমার বলেন, ‘এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে নারীদের জন্মহার কমে গেছে। তা ছাড়া শ্রমে নারীদের অংশগ্রহণও অনেক কম। বাংলাদেশে নারীদের অংশগ্রহণ ৩৬ শতাংশ।’ তার মতে, বাংলাদেশ শিক্ষায় অনেক এগিয়েছে। এতে তাদের সাফল্যও অনেক। তবে তারা দক্ষতায় পিছিয়ে আছে। তাদের অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। বাংলাদেশের নারীরা এই মুহূর্তে শ্রমবাজারে আসতে পছন্দ করছে। এখন বাংলাদেশের উচিত সরাসরি বিদেশি অর্থায়ন আনা। এফডিআই কীভাবে আনবে তারা সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। ভিয়েতনাম কীভাবে এত এফডিআই পায়, বাংলাদেশ কেন পায় না সেটা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন আছে। এখানে বড় একটা ডোমেস্টিক মার্কেট আছে। এখানে আমদানি বাড়ালে একই সঙ্গে রপ্তানি বাড়াতেও কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিআইডিএসের গবেষক ড. কাজী ইকবাল বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক খাতে অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। রপ্তানি বৈচিত্র্যায়ন বড় ভূমিকা রাখছে। অনানুষ্ঠানিক খাত নিয়েও কাজ চলছে। তবে সমস্যার জায়গা হলো, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে একটি মেয়ে তার ১২ বছরের পড়াশোনা শেষ করে কোথায় চাকরি নেবে সেটাই বড় চিন্তা থাকে। কারণ তার গ্রামে সে ধরনের কর্মসংস্থান নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শ্রমিকদের জন্য এমনিতেই সুযোগ অনেক কম।’
বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বর্তমানে ৩৬ থেকে ৪৩ শতাংশ। আমাদের অর্থনীতিতে তারা অনেক অবদান রাখছে। এটা বিস্ময়কর যে এদেশের উদ্যোক্তাদের এত সমস্যা সত্ত্বেও কীভাবে এত উন্নয়ন ঘটিয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে।’