প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩ ২০:৫৬ পিএম
প্রবা ফটো
রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় সরকারের নীতি কাজ করছে না বলে মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে সরকারের নীতির পরিবর্তন করতে হবে। সরকারের নীতি হওয়া উচিত- আমরা আর রিজার্ভ বিক্রি করব না। তাহলে মার্কেটে মুদ্রার বিনিময়হারের ওপর চাপ তৈরি হবে। আস্তে আস্তে স্থিতিশীলতা আসবে। আর সরকার যে ধার করে নিয়ে আসবে, সেটা জমা হবে। রিজার্ভ বাড়বে। আমাদের যেটা হচ্ছে, সেটা আস্থার ঘাটতি।’
রবিবার (১৪ মে) পিআরআই আয়োজিত প্রি-বাজেট প্রেস ব্রিফিং অ্যান্ড ডিসকাশন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই স্টাডি সেন্টার অন ডমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ড. এমএ রাজ্জাক।
ড. আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত ১৫ মাস ধরে একটি সমস্যা আছে এবং তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এটা যত দীর্ঘায়িত হয়, সমস্যা বড় হবে। ক্ষত ততটা বাড়তে থাকবে। সাধারণ মানুষের ওপর দীর্ঘস্থায়ী বোঝা চাপতে থাকবে এবং তা বড় হতে থাকবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক টিম গঠন করবে, যেটার মাধ্যমে নীতিগুলো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যেটা এখন পর্যন্ত করেছে, তা খুবই ক্ষুদ্র, বড় কিছু করেনি। বড়র মধ্যে করেছিল এক্সচেঞ্জ রেট নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত। সরকার এখনও সুদহার পরিবর্তন করেনি। মূল্যস্ফীতিকে অ্যাড্রেস করার জন্য এখনও পর্যন্ত একটি পলিসি করেনি, মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। রিজার্ভ নিয়ে এখন পর্যন্ত যে পলিসি নিয়েছে, তাতে হ্রাস বন্ধ হয়নি। এটা চলছেই। গত ৯ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। আগামী ৮-৯ মাস যদি আরও ৮-৯ বিলিয়ন হারায়, তাহলে আমরা কোথায় থাকব? রিজার্ভ সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। ফলে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। ঝুঁকিতে পড়বে প্রবৃদ্ধিÑ উল্লেখ করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের প্রাক্কলিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন বাস্তবতানির্ভর নয়। বাস্তবতা হলো, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিপেক্ষিতে ৫ বা ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিই অনেক বেশি। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে কোনো দেশই প্রবৃদ্ধির এ নিশ্চয়তা দিতে পারে না। বাংলাদেশ সেখানেই অবস্থান করছে।’
চলতি বাজেটে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার সুযোগের বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে বিশেষ সুযোগ ঘোষণা করা হয়েছিল। কোনো টাকাই ফেরত আসেনি। স্বার্থান্বেষী মহল কেউ কেউ এ সুবিধা নেবে। কিন্তু নৈতিকভাবে এটা সঠিক নয়। বদনামের ভাগিদার হবে কিন্তু উপকারে আসবে না। সরকারের এটা একটি আন-ওয়াইজ ও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এবার আবার প্রত্যাহার হবে। আমরা সাধুবাদ দেব, এটা আর দরকার নেই।’
অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষ নয় কিন্তু নিয়ন্ত্রণে সার্থক বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, তারা বাজেট কমিয়ে দেবে। বাজেটের খরচ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ খুবই শক্তিশালী। অন্তত ২০টি দেশে কাজ করেছি। এসব দেশকে এত কার্যকর ম্যানেজ করতে দেখিনি।
অনুষ্ঠানে পিআরইয়ের চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, দেশের ব্যাস্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোয় চাপের আভাস থাকলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের ৫০ বছরের পরিক্রমায় আজ যে অবস্থানে, তা একটি ইতিবাচক চিত্র। বাংলাদেশ এখন আর তলাহীন ঝুড়ির প্রসঙ্গে নেই, এটিকে অগ্রগতি ও উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করেন তিনি।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাস্টিক অর্থনীতির লক্ষ্যপূরণ হবে না বলে জানান ড. এমএ রাজ্জাক। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়, প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন চাপে আছে। এ ঘাটতির ওপর আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলন করা হবে।