× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পোশাকের অর্ডার কম থাকায় আমরা বেশ শঙ্কিত

সোহেল চৌধুরী

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩ ১১:৪২ এএম

আপডেট : ০৯ মে ২০২৩ ১১:৪৩ এএম

বিজিএমইএর সভাপতি ও জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান। প্রবা ফটো

বিজিএমইএর সভাপতি ও জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান। প্রবা ফটো

ফারুক হাসান, দেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ও জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

পোশাকশিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, পোশাক খাতে বর্তমানে ক্রয়াদেশ কমে গেছে। ফলে এ খাতে রপ্তানি আয়ও কম হচ্ছে। তাই চলতি বছরের পুরো সময়ে কিছুটা সংকট মোকাবিলা করতে হবে তৈরি পোশাক খাতকে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সোহেল চৌধুরী।

পোশাকশিল্পের বর্তমান অবস্থা কেমন যাচ্ছে?

ফারুক হাসান: বর্তমানে পোশাকশিল্পে খুব একটা ভালো সময় যাচ্ছে না। যার প্রধান কারণ ক্রয়াদেশ কম আসা। আগের থেকে অর্ডার বেশ স্লো ডাউন হয়েছে। গত মার্চ মাস থেকে আমাদের সামগ্রিক রপ্তানি আয়ও কিন্তু নেগেটিভের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যার মূলে রয়েছে, অর্ডার কম পাওয়া। ক্রয়াদেশের ওপরেই রপ্তানি আয় নির্ভর করে। আমরা এখন সমস্যায় আছি পেমেন্টের বিষয়েও। ক্রেতারা ঠিকমতো পেমেন্ট দিচ্ছে না। পেমেন্টের ক্ষেত্রেও বেশ স্লো ডাউন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্রেতারা এখন পোশাক ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট নিচ্ছে বেশি। এই মুহূর্তে অর্ডার কম থাকায় ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। এই বছরটা নিয়ে তাই আমরা বেশ শঙ্কিত।

কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খুলতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, জানতে চাই?

ফারুক হাসান: কাঁচামাল আমদানিতে আমাদের এলসিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। অর্ডারের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আমাদের ব্যবসাকে সব সময় আপডেট রাখতে হয়। এজন্য মেশিনারি আমদানি করতে হয়। উদ্যোক্তারা মেশিনারিজ আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন। ডলার-সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পর কারখানাগুলোতে কি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে?

ফারুক হাসান: এমনিতেই আমাদের অর্ডার কম। তার ওপর বড় সমস্যা হচ্ছে গ্যাসের মূল্য বেশি হারে বাড়ানো। আমাদের উচ্চ মূল্যের গ্যাসের চাপ নেওয়া এখন খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছি না। তার কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অর্ডার নিতে পারছি না। গ্যাসের দাম ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়ানোর পরও আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছি না। এখনও গ্যাসের প্রেশারে সমস্যা আছে। সুতরাং আমরা মনে করি, সরকার এ বিষয়ে খুব তাড়াতাড়ি একটা সমাধানে আসবে। গ্যাসের দামটাকে আবার বিবেচনায় নিয়ে সমন্বয় করা হবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও তেলের দাম কমেছে। প্রয়োজন হলে গ্যাসের ওপর যে ভ্যাট-ট্যাক্স রয়েছে তা কমিয়ে বা তুলে নিয়ে দামটাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। একই সঙ্গে আমরা যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছি না, সে বিষয়ে জোরালোভাবে নজর দেওয়া দরকার।

তাহলে গত এক বছরে উৎপাদন খরচ কেমন বেড়েছে? 

ফারুক হাসান: আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। বিশেষ করে আমাদের এখানে গ্যাসের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে, অন্যান্য শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। অর্থাৎ সবকিছুরই খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের উৎপাদন খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া আগামী ওয়েজবোর্ডের মাধ্যমে বেতন আরও বাড়ানোর আলোচনা চলছে, বেতন বাড়ানোও হবে। এজন্য আমরা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছি, তারা যেন আমাদের ফেয়ার প্রাইস, অ্যাথিক্যাল প্রাইস দেওয়ার বিষয়ে কাজ করে। আমরাও ন্যায্যমূল্যটা প্রত্যাশা করছি। এক্ষেত্রে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সব উদ্যোক্তাকে বলব তারা যেন আর কম দামে অর্ডার গ্রহণ না করেন।

সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে দেশের পোশাক খাত?

ফারুক হাসান: ২০২৩ সালটা খুবই চ্যালেঞ্জিংয়ের বছর আমাদের জন্য। একদিকে জ্বালানির দাম বেড়েছে, শ্রমিকদের মজুরি বাড়বে, এ ছাড়া এটি নির্বাচনের বছর। একই সঙ্গে কোভিড থেকে বের হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। চড়া মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেশ খানিকটা কমেছে। এজন্য আমি মনে করি ২০২৩ সালে আমাদের ব্যবসার টার্নওভার ২০২২ সালের চেয়ে অনেক কম হবে। সুতরাং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার, সব স্টেক হোল্ডার, ট্রেড ইউনিয়ন এবং বায়ার সবার সহযোগিতা দরকার। এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা চেষ্টা করব কারখানাগুলোতে উৎপাদন চালিয়ে যেতে। এ বছর নতুন করে বিনিয়োগ এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ কঠিন হয়ে যাবে। এখন আমাদের যে শ্রমিক রয়েছে তা ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সবার সহযোগিতা পেলেই আমরা কারখানার শ্রমিকদের ধরে রাখতে পারব। অন্যথায় এ বছরটা এতটাই কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাবে, যা সবার জন্য ভালো হবে না।

রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন?

ফারুক হাসান: আমরা পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। এক্ষেত্রে আমরা অনেকটা সফলও হয়েছি। আমরা এ নিয়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের বিজিএমইএতে ইনোভেশন ও ফিউচার সেন্টারও তৈরি করা হয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরেও রপ্তানি আয় বাড়াতে বেশ জোরেশোরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। গত এক বছরে মার্কেট ডাইভারসিফিকেশন নিয়ে আমরা বেশ কাজ করেছি। এতে আমাদের কোরিয়া, জাপান, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানি আয় বেড়েছে।

আসছে বাজেটে তৈরি পোশাক খাতের প্রত্যাশা কী?

ফারুক হাসান: আমাদের রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। এক্ষেত্রে রিজার্ভকে শক্তিশালী করতে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে। আমাদের অনেক কিছুই আমদানি করতে হয় বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্সের মাধ্যমেই অর্জিত হয়ে থাকে। বাজেটে রপ্তানিকে সাপোর্ট দিতে হবে। আমি মনে করি, ২০২৬ সালের আগেই আমাদের রপ্তানি আয়ের আকার বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব ইনসেনটিভ রয়েছে, তা আরও বাড়ানো দরকার। রিসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য যেসব ভ্যাট-ট্যাক্স রয়েছে, তা উঠিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করেছি। সোলার প্যানেল স্থাপনে বেশ কিছু জিনিস আমদানি করতে হয়। সোলারের জন্য যেসব জিনিসপত্র আমদানি করতে হয় তার ওপরে ডিউটি ওয়েভার দেওয়ারও প্রস্তাব করেছি। এ ছাড়া নন-কটনের রপ্তানি বাড়াতে ইনসেনটিভের কথাও বলেছি।
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা