× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উৎপাদনে অক্ষম কেন্দ্র পুষতেই আগ্রহী পিডিবি

মামুন-অর-রশিদ

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩ ০৯:৫১ এএম

আপডেট : ০৯ মে ২০২৩ ১৩:৩০ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে একটি ১০৫ মেগাওয়াটের কেন্দ্র রয়েছে পিডিবির। কেন্দ্রটি গত অর্থবছরে এক দিনের জন্যও চলেনি। উল্টো সারা বছর ৭৪ হাজার ৭৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে কেন্দ্রটিকে আলোকিত রাখতে হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে ৩৯ কোটি ২৬ হাজার ৩০৯ টাকা। এর আগের অর্থবছরও কোনোদিন সচল ছিল না কেন্দ্রটি। যদিও সেটির পেছনে ওই বছর খরচ হয়েছে ২৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

শুধু টঙ্গী না, গত বছর একটুও চলেনি পিডিবির এমন কেন্দ্রের মধ্যে আরও রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ ১১৫ মেগাওয়াট, ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট, বরিশাল গ্যাস টারবাইন ও ভোলা ডিজেল জেনারেটর। আবার সৈয়দপুর ও রংপুরে ২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর ছিল মাত্র ১ শতাংশ। অর্থাৎ সক্ষমতার মাত্র ১ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে সেগুলোতে।

এছাড়াও উৎপাদন হয়েছে গোপালগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টে ২ শতাংশ, হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টে ৩ শতাংশ এবং বাঘাবাড়ী ১৭১ মেগাওয়াট কেন্দ্রে ৩ শতাংশ বিদ্যুৎ। আর শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট ও শাহজিবাজার ১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে ৭ শতাংশ করে। 

হিসাব করে দেখা গেছে, সব মিলিয়ে পিডিবির বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ৬ হাজার ২৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার। কেন্দ্রগুলো গত অর্থবছর গড়ে ৩০ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চলেছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৯-২০ ও ২০১৮-১৯ বছর চলেছে ৩৬ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে। বাকি তিন বছর ৩০ ভাগের আশপাশে ছিল গড় প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর।

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এসএম ওয়াজেদ আলী সরদার বলেন, ‘যেসব কেন্দ্রের প্রয়োজন পড়ছে না, সেগুলোর বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না পিডিবি।’

প্ল্যান্ট নির্মাণ পরিকল্পনায় গলদ

পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয় সান্ধ্যকালীন চাহিদা মেটাতে। তবে চাহিদা দেখা দিলে দিনেও, এমনকি সব সময়ই চালানো হয় কেন্দ্রগুলো। বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকায় প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রগুলো কেন নির্মাণ করা হয়েছে। ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ প্রতিবেশী দুটি জেলা। দুই জেলায় নির্মাণ করা হয়েছে দুটি পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট। ফরিদপুর কেন্দ্রটি গত অর্থবছর চলেছে মাত্র ১০ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে। আর গোপালগঞ্জ চলেছে ২ ভাগ।

এর আগের বছর ফরিদপুর ৪ ভাগ চললেও গোপালগঞ্জ এক দিনও চলেনি। তারও আগের বছর ফরিদপুর ৯ ভাগ আর গোপালগঞ্জ চলেছে ৬ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে। যদি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে দুই জেলার মধ্যবর্তী কোনো এলাকায় একটি ৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণ করা হতো, তাহলেই চাহিদা মেটানো সম্ভব হতো। আবার অদূর ভবিষ্যতে রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ কেন্দ্র দুটি চালানোর হয়তো দরকারই হবে না।

তেলচালিত কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার

ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে সরকার। লক্ষ্য দেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়ন। অন্যদিকে রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া এবং ঠাকুরগাঁওয়েও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ দিয়ে উত্তরাঞ্চলের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করা হচ্ছে। ফলে ফরিদপুর ও রংপুরের ডিজেলচালিত কেন্দ্রের আর দরকার হচ্ছে না।

পিডিবির তথ্য বলছে, ২০২১-২২ ও ২০২০-২১ অর্থবছর কেন্দ্র দুটি ১ ভাগ করে চলেছে। এর আগের বছর সৈয়দপুরের কেন্দ্র মোট ক্ষমতার ৫ শতাংশ আর রংপুর কেন্দ্র ১ শতাংশ উৎপাদন করেছে। ফলে এ কেন্দ্র দুটিরও প্রয়োজন আর থাকবে না। তখন উত্তরবঙ্গের তেলচালিত অন্য কেন্দ্রগুলোও বসিয়ে রাখতে হবে।

এদিকে ডলার সংকটে জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। কেন্দ্রগুলো উন্নত না হওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও অনেক বেশি। এসব কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও উৎপাদনে যেতে পারছে না। ফলে ঘটছে লোডশেডিং।

পিডিবি জানাচ্ছে, কখনও জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হতে পারে, এই বিবেচনা থেকে উৎপাদনহীন কেন্দ্রগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এসএম ওয়াজেদ আলী সরদার বলেন, ‘কখন কোন কেন্দ্রের প্রয়োজন পড়ে, সেটি এখনই বলা সম্ভব না। তাই হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে পিডিবি কিছু করতে চায় না।’

খরচ তোলা হয় বিদ্যুতের দামের মাধ্যমে

কেন্দ্র চালানো না হলে শুধু জ্বালানি খরচ বাঁচে। কিন্তু অন্য খাতে ঠিকই খরচ হয়। যা একেবারে কম নয়। তা ছাড়া পুরোনো কেন্দ্র উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। লোকবলের খরচ আছে। বিদ্যুতের খরচ আছে। এসব ব্যয় বিদ্যুতের দামের মধ্যে যুক্ত করে পিডিবি। ফলে বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দাম বাড়ে, যা পরিশোধ করতে হয় সাধারণ মানুষকেই। অথবা সরকারকে ভর্তুকি হিসেবে দিতে হয়, যা জনগণের পকেট থেকেই আসে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পিডিবির পরিকল্পনা যথাযথ হলে এ খরচ কমানো যেত। এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা সরকারকে দেখিয়েছি, কীভাবে বিদ্যুৎ খাত সংস্কারের মাধ্যমে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনছে না। এখন সরকার সরাসরি বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করায় এসব কথা বলার জায়গাও যেমন নেই, তেমনি শোনারও কেউ থাকল না।’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের অর্থ তছরুপের সবচেয়ে বড় জায়গা হচ্ছে কেন্দ্র নির্মাণ। সঞ্চালন ও বিতরণে অনেক কষ্ট থাকলেও কেন্দ্র নির্মাণে তা থাকে না। এক জায়গায় বসেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঙ্গত কারণেই প্রয়োজন না থাকলেও তাই কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো এখন পড়ে রয়েছে। উল্টো খরচ হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা