× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য

আসিফ শওকত কল্লোল

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৩ ১৩:৫১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চারটি দেশ এবং অঞ্চলের সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসির) জন্য প্রযোজ্য শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা চুক্তি যত দ্রুত সম্ভব বাড়ানো বাংলাদেশের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ ২০২৬ সলের ২৩ নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটলে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক বেড়ে যাবে। এর ফলে বাংলাদেশ রপ্তানি খাতে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাতে থাকা মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) বা অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) করা সম্ভব নয়। এ কারণে দ্রুততম সময়ে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসির) জন্য প্রযোজ্য শুল্ক মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোর চুক্তি জরুরি। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে ভুটান ছাড়া আর কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এফটিএ নেই । এমনকি নেপাল ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের এফটিএ এবং পিটিএ ঝুলে আছে। অন্যদিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ২০২২ বছরের শেষে বাংলাদেশের জন্য এলডিসি বাণিজ্য সুবিধা ছয় বছর এবং পরবর্তীতে তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে কোনো দেশের আপত্তি না থাকলে বাংলাদেশের জন্য এলডিসি বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে। তবে বাংলাদেশের জন্য এলডিসির সুবিধা আরও কয়েক বছর পাওয়ার ঘোষণা নির্ভর করছে প্রভাবশালী দেশগুলোর মতামতের ওপর। এই প্রভাবশালী দেশগুলো হচ্ছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পরপর্তী তিন বছরের জন্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক মুক্ত সুবিধা এবং পরে জিএসপি প্লাস সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। আর অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই এলডিসি থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসার পর এ বাণিজ্য সুবিধা দিতে রাজি হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এফটিএ চুক্তি করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাগাদা দেওয়া হলেও নেপাল সরকার সাড়া দিচ্ছে না। নেপালের সঙ্গে পিটিএর সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে আরও আগেই, কিন্তু নেপাল বাংলাদেশের সঙ্গে এ চুক্তি করতে ভয় পাচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করলে কী ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে যায় তাই নিয়েই নেপাল সরকারের ভয়। 

তিনি আরও বলেন, নেপাল ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের পিটিএ চুক্তি করার কথা চলছে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া সরকার বাংলাদেশের গার্মেন্ট পণ্য নিতে চায় না। কারণ ইন্দোনেশিয়া কয়েক ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্যসহ পাম অয়েল বাংলাদেশে রপ্তানি করছে। আর ওদের গার্মেন্ট পণ্যের মান বাংলাদেশ থেকে অনেক ওপরে। এ কারণেই ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্ট পণ্য নিতে চায় না। অবশ্য বাণিজ্য সচিব নতুন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বলেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাপানের সঙ্গে ইপিএ চুক্তি স্বাক্ষর করার ব্যাপারে বাংলাদেশ আশাবাদী। 

ভারতের সঙ্গে ‘ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা সেপা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। এর এক মাস আগে বাংলাদেশ ভারত সচিব পর্যায়ে বৈঠকে সেপা চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় এলডিসি থেকে উত্তরণেরে পরও শুল্ক মুক্ত সুবিধা আরও কয়েক বছর বাড়ানোর জন্য অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন। আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে ডব্লিউটিও’র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেই যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সমর্থনের প্রয়োজন হবে। 

এ বিষয়ে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, একটা অংশীদারত্ব চুক্তি অথবা এফটিএ করতে দশ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। আমাদের হাতে আছে মাত্র আড়াই বছর, এই অল্প সময়ের মধ্যে এসব চুক্তি করা কার্যত অসম্ভব। তিনি বলেন, একই সঙ্গে বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় ডব্লিউটিও থেকে সেই সুবিধার সিদ্ধান্ত পাওয়ার বিষয়টিও জটিল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রপ্তানির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে চুক্তি করার জন্য এখনই থেকেই জোর প্রচেষ্টা চালানো উচিত। 

এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ইউরোপের বাজারে ২১ বিলিয়ন ডলারের (১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা) রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে ১৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের (১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) পণ্যই তৈরি পোশাক খাতের। গড়ে ১২ শতাংশ হারে ইউরোপের বাজারে রপ্তানি বেড়েছে বাংলাদেশের। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে রপ্তানি কমতে পারে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের (১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) মতো। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে যে বাড়তি শুল্ক দিতে হবে, তাতে করে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে থাকবে কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, তুরস্ক ও ভিয়েতনাম।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সার্বিকভাবে ৫ শতাংশ রপ্তানির ক্ষতি ধরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি ২০২৭ সাল নাগাদ ৭ বিলিয়ন ডলার (৫৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) কম হতে পারে। ২০২৭ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত মোট রপ্তানির ক্ষতি ২৮ বিলিয়ন ডলার (২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা) পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া এলডিসি দেশগুলো নিজের দেশে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার ওপর নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি দিতে পারে। বাংলাদেশ এখন কৃষি ও শিল্প খাতের নানা পণ্য বা সেবায় ভর্তুকি দেয়। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এসব ভর্তুকি ও নগদ সহায়তা বন্ধ করার চাপ আসতে পারে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ থেকে। এর ফলে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে দেশের ওষুধশিল্প। বর্তমানে এলডিসি হওয়ায় বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ দিতে হয় না। কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের ওপর ওষুধশিল্পের মেধাস্বত্ব বিধিবিধান আরও কড়াকড়ি হবে এবং মেধাস্বত্বের জন্য মূল্য পরিশোধ করতে হলে ওষুধের দাম বেড়ে যেতে পারে। তবে ওষুধশিল্পের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে মেধাস্বত্বের সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পাবে বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা